সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’মূলক কোনো বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসনের বক্তব্যের কোথাও রাষ্ট্রদ্রোহের কিছু ছিল না। এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সৈয়দ আশরাফের শোভা পায় না। সৈয়দ আশরাফ সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করেছেন। আমি জানি না তিনি ওই সময়ে কোন অবস্থায় ছিলেন এবং কী অবস্থায় এ কথা বলেছেন।’ গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এ সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, আবদুস সালাম, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, শামীমুর রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ দুই মাস পর দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখরিত হতে দেখা গেছে। অবশ্য আত্দগোপনে থাকা এসব নেতাদের দেখে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, গত তিন মাসের ৬ বিভাগে ২২৭ জন গুম হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১০১ জন, সিলেটে ৩ জন, রাজশাহীতে ৪০ জন, খুলনায় ৫০ জন, বরিশালে ৫ জন, ঢাকায় ১৩ জন, রংপুরে ১৫ জন নেতা-কর্মী গুম-খুন হয়েছে। এ সময়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১৮ দলীয় জোটের মোট ২৯৪ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তার দাবি, তিন মাসে গুম হয়েছে ১৮৭ জন নেতা-কর্মী। কেবল তাই নয়, গত ১০ দিনে বিচারবহিভর্ূত হত্যা হয়েছে ১০ জন। পরে দলের পক্ষ থেকে গুম, খুন, হামলা-মামলার একটি তালিকা সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো হয়। তারেক রহমানের খালাস মামলায় সরকার পক্ষের আপিল করার প্রতি ইঙ্গিত করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, যদি কোনো বিচারক তাদের পছন্দ মতো রায় না দেয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। কেবল তাই নয়, সরকার প্রশাসনও বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে। উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের পর থেকে যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দল ও ভিন্নমত দমনে খুন-গুম-হত্যাসহ নজিরবিহীন প্রতিহিংসার রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে। সারা দেশে ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা এহেন কর্মকাণ্ডে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারকে বলব, এসব গুম-গুপ্তহত্যা-খুন ও নির্যাতন বন্ধ করুন। এসব গুম হত্যার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানিবাধিকার সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির পর দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। গণতন্ত্র এখন মৃত। গণতন্ত্রের শবযাত্রা শুরু হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যশোর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, নাটোর, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় সরকার দলীয় লাগমহীন সন্ত্রাস আতঙ্কে মানুষ ঘর-বাড়িছাড়া হয়েছে। ওইসব এলাকার গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ঝোপ-ঝাড় ও জঙ্গলে তারা পালিয়ে আছে।’ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্রুত মুক্তি দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করার দাবি জানান তিনি।