জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনা না করে কৃষকদের বিটি বেগুনের চারা হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছে বিটি বেগুনবিরোধী মোর্চা। অবিলম্বে এই বেগুন চাষ বন্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।
দেশের কৃষি খাতে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রথম ফসল বিটি বেগুনের চারটি জাত কৃষকের হাতে গতকাল তুলে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। নতুন এই বেগুনের জাতগুলো দেশের চারটি অঞ্চলের ২০ জন কৃষকের হাতে তুলে দেন তিনি।
জিনগতভাবে পরিবর্তিত বেগুনের এই জাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী গতকাল বলেছিলেন, দেশের মানুষের কাছে খুবই প্রিয় বেগুন চাষ করতে কৃষক প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে অন্য ফসল, মাটি, পানি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়। বিটি বেগুন চাষে কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে আসবে। উত্পাদন খরচও এতে কমে যাবে।
উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনিক) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিটি বেগুন চাষ বন্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, এই বেগুন চাষের কারণে জনস্বাস্থ্য ও প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।
সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিটি বেগুন চাষের ক্ষেত্রে দেশি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রচার করা হচ্ছে বিশ্বের ২৯টি দেশে বিটি বেগুনের চাষ হচ্ছে। কিন্তু এ তথ্য ঠিক নয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ তিনটি দেশে এই বেগুনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইনের আদালতের নির্দেশে এই বেগুনের চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতেও সরকারের আদেশে তা বন্ধ আছে। ওই দুই দেশে ব্যর্থ হয়ে এখন বাংলাদেশে এই বেগুন চাষের চেষ্টা চলছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, স্বাস্থ্য, মত্স্য, পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বিটি বেগুন চাষের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক চাপে এই বেগুন চাষের অনুমতি দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের এই বিটি বেগুনের প্রয়োজন নেই। বিদেশিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকার জনস্বার্থকে উপেক্ষা করেছে।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বলা হচ্ছে এই বেগুন চাষ করলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে না। কিন্তু বিটি বেগুন গাছকেই বিষাক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। বিটি বেগুন মানুষের খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। পোকা দমনের নামে এই বিতর্কিত বেগুন চাষ বাংলাদেশের কৃষক ও ভোক্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়াও নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য এই বেগুন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। সমাবেশে উন্নয়নের ধারা ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আমিরুল রসুল, উবিনিকের গবেষক এম এ সোবহান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।