আদমি পার্টি ও আমাদের গণজাগরণ মঞ্চ

0
159
Print Friendly, PDF & Email

‍‍“চাশমে বাদ্দুর” হিন্দি শব্দ নাকি উর্দু এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না, তবে এর অর্থ রাশিয়ার বেলারুশে বেড়াতে গিয়ে এক পাকিস্তানীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। একই হোটেলে থাকার কারনে তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। তার মুখের এই শব্দটি বুঝতে না পেরে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, উত্তরে তিনি যা বললেন তা হলো- আমরা বাংলাদেশীরা হরহামেশাই বলে থাকি নজর যেন না লাগে। উপরিউক্ত বাক্যগুলো এই কারনেই লিখলাম যে আমরা অনুকরনে পটু। যেমন সিনেমায়, নাটকে, রিয়েলটি শোতে, টিভি বা সংস্কৃতি যত মাধ্যম আছে সবকিছুতেই আমরা পাশ্ববর্তী দেশগুলিকে অনুকরন অনুসরন করি। উদাহরন এতবেশী যে, পাঠকগণ বিরক্তবোধ করবেন কারন জানা কথা বার বার শুনতে সবার বিরক্তবোধ লাগে। কারও না লাগলেও আমার যে লাগে এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। এখন তো আমাদের দেশে টিভির বিজ্ঞাপনেও হিন্দি কথা বলা হয়।

আমার আজকের লেখাটি অবশ্য ভিন্ন বিষয়ে। সম্প্রতি ভারতে “আম আদমি পার্টি” সংক্ষেপে “আপ” যেন এক বিশাল বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে ভারতীয় রাজনীতিতে। সেই আম আদমির ডাকে দেশের মানুষ যেন অনিল কাপুর অভিনীত “নায়ক” ফিল্মের বাস্তব রুপ দেখতে পেয়েছে। যেমন ফিল্মে ছিলো অনিল কাপুর একদিনেই পুরো রাষ্ট্রের পরিবর্তন এনে দেয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ দেখিয়ে পুরো ভারতবর্ষে ফিল্মটি সুপার ডুপার হিট হয়। সেই ছবির আদলে আম আদমি পার্টির প্রধান শুরুতেই যা দেখালেন তা হলো শপথ নিতে যাওয়ার সময় অরবিন্দ কেজরিওয়াল কোনো ব্যক্তিগত বা সরকারী গাড়িতে চড়েননি। তিনি গিয়েছিলেন মেট্রোতে বা পাতাল ট্রেনে চড়ে। এই ঘটনাটি উপমহাদেশের সকল মানুষকে অবাক করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় উনি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌছেছিলেন নির্দিষ্ট গন্তব্য। যা আসলেই বিস্ময়কর। এরপর তিনি দ্রুতই তার আসল কাজটি করে ফেললেন যা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো। বিদ্যুতের দাম তিনি অর্ধেকে নামিয়ে ফেললেন। কোত্থেকে এই টাকা আসবে জানতে চাননা উনি। তিনি চেয়েছেন ওয়াদা পূরন তথা জনগনের পাশে দাড়ানো। এরপরই তিনি একটি অভিযোগ বাক্স খুললেন যেখানে সাধারন জনগণ তাদের নিত্যদিনের অভিযোগ গুলো রাখবেন এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল দ্রুত সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করবেন। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহার করলেন এ যেন নায়ক ফিল্মকেও হার মানিয়েছে।

যাই হোক আমার লেখার উদ্দেশ্য হলো আম আদমি পার্টির মত আমাদের দেশের বর্তমান তারুণ্যর জোয়ার বলে আমরা যাকে সমর্থন করি বা দিয়ে যাচ্ছি তা হলো “গণজাগরণ মঞ্চ”। এই মঞ্চ কি ঐ পথেই হাটছে? যদি ঐ পথেই হেটে থাকে তাহলে জাতি কি তা মেনে নেবে? যেমনটি মানতে পারেনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের রাজনীতি করার প্রয়াস।

সবকিছুকেই আমরা অনুকরন করছি এবং তার বেশীর ভাগই হলো ভারতীয় চাল চলন তথা সংস্কৃতিকে। আবার মুখে বলছি এই বাংলাদেশ কারো কথায় চলবে না, আমরা আমরাই সকল সমাধান করবো। তাই যদি হয় আমি প্রেডিকশন করছি না শুধু মাত্র আন্দাজ করছি গণজাগরণ মঞ্চ কি আপ এর দিকে যাচ্ছে? গেলে ভালো কথা, কিন্তু ”আপ” এর উত্থান আর গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান এক নয়। মঞ্চ একটি মহান উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। আর ”আপ” নেমেছিলো শুধুমাত্র দূর্নীতির বিরুদ্ধে। দুইটা দুই জিনিষ। আমাদের দেশের মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে আমরা জনপ্রিয়তাকে সহ্য করে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের সাথে থাকতে পারিনা। আমাদের মধ্য চলে আসে সংসদে গিয়ে বসার স্বপ্ন। আমাদের মাঝে চলে আসে দেশ সেবার নামে ক্ষমতার মসনদে বসে দুর্নীতির শীর্ষে যাওয়া এবং আত্মীয় স্বজনকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বানানোর স্বপ্ন। এখন আমাদের দেশে নূন্যতম জনপ্রিয়তা যার আছে সেই চায় সংসদে যেতে। আজকে জাগরণ মঞ্চ যেভাবে মার্চ করছে তাতে আমার মনে হয় শুধুমাত্র তা সংসদে যাবার বাসনা থেকেই কিনা। ইতিমধ্য শুনলাম মঞ্চের প্রথম দিকে থাকা এক নারী নেত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের নমিনেশন কিনেছেন। দোয়া করি উনি ভালো কিছু করুক। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও যতটুকু দুর থেকে জানতাম উনি একজন ভালো অভিনেত্রী। শুধুমাত্র কয়েকটা সভা সেমিনার ও সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেষ অবধি তিনিও লোভ সামলাতে পারলেন না। আসলে বলতে দ্বিধা নেই অফার পেলে হয়তো আমিও কখনও ফিরিয়ে দিব না। সবার ঐটাই একমাত্র পথ সাধারণ মানুষের সম্পদ টাকা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিনষ্ট করে নিজের পকেট আর বউদের সম্পদ বাড়ানো। তবে একটা জিনিষ প্রতীয়মান হলো যে, আমাদের দেশের মন্ত্রী এমপিদের বউরা খু্বই ভাগ্যবতী এবং বিশ্বাসিও কারন এ পর্যন্ত অনেক ঘটনা শুনেছি স্বামীর বহু টাকা পয়সা নিয়ে স্ত্রীর পলায়ন। কিন্তু আমাদের দেশের মন্ত্রী এমপিদের বউ রা সেদিক থেকে পুরোপুরিই আস্থাভাজন। তারা তাদের অর্থ সম্পদ যথা পাত্রেই সুরক্ষিত রাখে।

গণজাগরণ মঞ্চ আশা করি তাদের নিজেদের এজেন্ডার বাহিরে যাবে না। দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙ্গে দিবে না। এখন আবার দেখছি তারা সারা দেশেই ক্যাম্পেইন করছে। অবশ্য তাদের পরবর্তী কর্মসূচী কি তা আমি জানি না। তবুও আর যাই হোক গণজাগরণ মঞ্চের সাথেই ছিলাম এবং থাকবো ।

সরকার যেখানে বদ্ধপরিকর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করবে এবং সেই বিচারের টাইমও তারা বলে দিচ্ছে সেখানে এত হতাশ হওয়ার কারন কি তা আমি বুঝতে পারছি না। নতুন সরকার আসলো মাত্র সেটা যেভাবেই হোক, তারাই এই ট্রাইবুন্যাল গঠন করেছে এবং তারাই চালকাশক্তিতে। তাদের উপড়ে আস্থা আছে বলেই মানুষ নিরঙ্কুশভাবে তাদেরকে ভোট দিয়ে আবারও ক্ষমতায় এনেছেন।

প্রতিদিন টিভি খুললেই ইমরান এইচ সরকারকে যেমন তরতাজা, স্বাস্থ্যবান ও হাস্যজ্বল দেখি ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও দেখতে চাই। মিডিয়া কাভারেজে যারা আসে তারা তাদের এই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে। আমরা এই ঘটনাগুলো আর দেখতে চাইনা অন্তত গণজাগরণ মঞ্চের ক্ষেত্রে। মিডিয়া কাভারেজে আমরা ইমরান এইচ সরকারকে যেভাবে দেখি প্রতিনিয়ত যেন তিনি সেভাবেই থাকেন। বারবার এই চিরন্তন নিয়মের প্রতিফলন যেন ঘটে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। না হলে বাংলার সাধারণ মানুষ কোনদিন ক্ষমা করবেনা। শান্তিতে থাকুক বাংলাদেশ, নজর যেন না লাগে আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি।

শেয়ার করুন