২২ দিনে ৮৮টি গলাকাটা লাশ

0
105
Print Friendly, PDF & Email

সম্প্রতি সারা দেশে গলাকাটা কিংবা মস্তকবিহীন লাশের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত ২২ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এমন ৮৮টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে পরিচয় মিলেছে ২০টি লাশের। পরিচয় পাওয়া লাশের মধ্যে রয়েছেন ই্উপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেত-কর্মী।

পুলিশ ও একটি মানবাধিকার সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২২ জানুয়ারি বুধবার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শাঁখারীবাজার এলাকা থেকে মো. লিঙ্কন (১৮) নামে এক দর্জি শ্রমিকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ পাওয়ার চার দিন আগে লিঙ্কন নিখোঁজ হয়েছিলেন।

একই দিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বারগাঁও বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক শিশুর (১২) বস্তাবন্দী গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

একই দিনে ফরিদপুর সদর হাসপাতালের পেছনে একটি পরিত্যক্ত দোকানের নিচে থেকে রমেন্দ্রপ্রসাদ দাস নামের এক কলেজছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাকের ছাদে আব্দুল জলিল নান্নু নামে এক বিএনপির কর্মীর মস্তকবিহীন লাশ পাওয়া যায়। নান্নুর বাসা যশোরের ঝিকরগাছা এলাকায়। পরদিন ডিবি পুলিশের ডুবুরি দল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের একটি পুকুর থেকে নান্নুর মাথা উদ্ধার করে।

একই দিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে খুলনার তেরখাদা থানা পুলিশ উপজেলার মণ্ডলগাতী বিলে জনৈক লিটনের ঘেরের মধ্যে থেকে বাহারুল আলম খাঁ (৩০) নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে। কোনো লেনদেনের কারণে সহযোগীরা তাকে হত্যা করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

গত ১৭ জানুয়ারি গাজীপুর কোনাবাড়ী ভারান্ডা এলাকা থেকে আনোয়ারা বেগম (৫৫) নামে এক গৃহকর্ত্রীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, রাত আটটার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আনোয়ারা বেগমের ঘরে ঢুকে তাকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

গত ১৫ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে ওই এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানার আমবাগান এলাকা থেকে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা আগে নগরীর আগ্রাবাদে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন পুলিশ কনস্টেবল ফরিদুল আলম (৪২)।

ওই দিন কুড়িগ্রামে একই পরিবারের চারজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন : সুলতান আহমেদ (৫৫), তার স্ত্রী হাজেরা বেগম (৪৫), নাতনি রোমানা বেগম (১৪) ও আনিকা (৭)।

গত ১১ জানুয়ারি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় আবু তালেব মিয়া নামে এক আদম ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে পুলিশ বড় গোপালদী এলাকার একটি বিল থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

গত পয়লা জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় রোজিনা নামে সাত বছরের আরেক শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সুমন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

কেন এত গলাকাটা লাশ? জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের কাণ্ড। আর গলা কাটা লাশের বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি খুব শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমেনা আফরোজ ডালিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, মানুষের নৈতিক অবক্ষয় শূন্যের কোঠায় এসেছে। একজন আরেক জনের প্রতি বৈরিতা নিয়ে বড় হচ্ছে। ফলে মানুষে মানুষে শত্রুতা দিন দিন নির্মম হয়ে উঠছে। এসব ঘটনা তারই ফল বলে মত দেন তিনি।

শেয়ার করুন