অবশেষে রওশন এরশাদের কাছে আরেক দফা হেরে গেলেন সাবেক দাপটশালী প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। শেষ পর্যন্ত সংরক্ষিত মহিলা আসনে রওশন এরশাদের বোন মেরিনা ওহাবকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হলেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির জন্য নির্ধারিত পাঁচটি আসনের তিনটিই রয়ে যাচ্ছে পার্টি পরিবারের মধ্যে।
পার্টির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়ন নিয়ে এরশাদ এবং রওশন এরশাদের মধ্যে সর্বশেষ যে ‘টাগ অব ওয়ার’ সৃষ্টি হয় তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মেরিনা ওহাব। রওশন এরশাদ চাইলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ চাইছিলেন না মেরিনা ওহাব সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হোক।
কিন্তু রওশন এরশাদ নাছোড়বান্দা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এরশাদের দূরসম্পর্কের বোন মেরিনা এবং তার ভাই জিএম কাদেরের স্ত্রী সেরিফা কাদের যদি সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হতে পারেন তাহলে তার ‘আপন বোন’ কেন পারবেন না? এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারন করলে সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতা মধ্যস্থততা করেন।
জানা গেছে, রাজনৈতিক কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও পরিবারের ওই তিন নারী সদস্যকে নিয়েই এরশাদ এবং রওশন এরশাদ সংসদে যাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। এজন্য সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির ভাগে যে পাঁচটি পড়েছে তার মধ্যে ৩টি আসনই পরিবারের মধ্যে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন এরশাদ ও রওশন এরশাদ।
এছাড়া, বাকি দুজনের মধ্যে একজন হলেন জাতীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক নাজমা আক্তার এবং কুড়িগ্রামের সাবেক নারী এমপি নুরে হাসনাত চৌধুরী। ব্যাপারটি একেবারেই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই বিষয়টি প্রকাশ করা হবে বলে পার্টির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
পার্টি সূত্রে আরো জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার জন্য পার্টির পক্ষ থেকে নোটিশ করে নারী নেত্রীদের জানানো হয়। তারই আলোকে গত ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মোট ৯৬ জন মনোনয়নপত্র কেনেন। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ হাজার করে মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা পার্টি ফান্ডে জমা করা হয়।
মনোনয়ন বিক্রির পর পদ প্রত্যাশীদের গত ২০ জানুয়ারি বনানীর পার্টি কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। কিন্ত হঠাৎ করেই সেই সাক্ষাৎকার কর্মসূচি বাতিল করা হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন মহিলা পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাদের অনেকেই সেদিন বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে অভিযোগ করেন, পার্টির পক্ষ থেকে কোটি টাকার ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ করা হয়েছে।
এক পদপ্রার্থী রাইজিংবিডিকে বলেন, এরশাদ পরিবারের নারীদেরই এমপি করা হচ্ছে-এমন খবর আগেই ছড়িয়ে পড়লে কেউ মনোনয়ন কিনবেন না, তাই প্রকাশ করা হয়নি। ফলে গোপনেই থেকে যায় পরিবারের সদস্যদের মনোনয়ন কেনার বিষয়টি।
ওই নেত্রী অভিযোগ করে বলেন, এরশাদ পরিবারের যে তিন নারীকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তারা কেউই কোনোদিন পার্টির কোনো কর্মসূচিতে ছিলেন না। দেখা যায়নি কোনো সভা-সমাবেশ বা সেমিনারে। তবু কেন তাদের এই পদে নিয়ে আসা হচ্ছে তা পার্টির অনেক নেতাই বুঝতে পারছেন না।
জাতীয় পার্টির সূত্রটি আরো জানায়, পরিবারের তিনটি বাদে বাকি দুটি আসনের জন্য পার্টির চট্টগ্রামের নেত্রী মেহজাবিন মোরশেদ, কুড়িগ্রামের নুরে হাসনাত চৌধুরী ও জাতীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা নাজমা আক্তার তালিকায় আছেন। এদের মধ্যে মেহজাবিন মোরশেদ বাদ পড়ছেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে।