জামায়াত ছাড়তে দেশি-বিদেশি চাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে হঠাৎ করেই বিএনপি চেয়ারপারসনের সমাবেশে যাননি জামায়াত নেতারা। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণ সরব এবার বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে।
তবে বিএনপি এই আলোচনাকে ভিত্তিহীন বলেই মনে করছে। দলটির মতে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ১৮-দলীয় জোট বেড়ে ৩০/৩২ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে ১৭/১৫ হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু আরটিএনএন- কে দলের এমন মনোভাবের কথাই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জোট ভাঙছে এ সংবাদ স্রেফ গুজব। এর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা ১৮ দল আছি সেটি ৩০/৩২ দল হতে পারি। কিন্তু ভেঙে ১৭ দল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এগুলো আওয়ামী প্রচারণারই অংশ।’
একান্ত এ আলাপচারিতায় ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি কথা বলেন বিএনপি নেতাদের জামিন, সোমবারের গণসমাবেশ, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা, ১৮ দলের মধ্যকার ভাঙন আলোচনাসহ নানা বিষয়ে।
বিএনপি নেতাদের জামিন সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত কিনা জানতে চাইলে দুদু বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নেতারা জামিন পাচ্ছেন। জামিনকে সমঝোতা নয় বরং আমি বলব- সরকারের শুভবুদ্ধির উদয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখনকার সরকার অবৈধ। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আক্রমাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতেই প্রমাণ হচ্ছে তিনি জনগণের নেত্রী বা প্রতিনিধি নন। তাই তাদের পক্ষে প্রশাসন ও জনগণ সবকিছু আগের মত কন্ট্রোলে রাখা কঠিন হবে। সবকিছু উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী এখন বাধ্য হয়েই সমঝোতার দিকে এগোবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আর যদি প্রধানমন্ত্রী এটা না করেন, তাহলে বাংলাদেশরে যে অগ্রগতি ও সম্মান তা বিলীন হয়ে যাবে। মাত্র ৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোট দেয়নি। সুতরাং সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
গণসমাবেশে জামায়াতের অনুপস্থিতি বিষয়ে এক প্রশ্নে দুদু বলেন, ‘দেশের যেখানে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সব জায়গাতে জামায়াতের বড় ধরনের সম্পৃক্ততা থাকছে। হয়তো বা কোনো শঙ্কার কারণেই তারা সমাবেশে আসেনি।’
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘শরিকদের নিয়েই আমরা সমাবেশ করে আসছি। কিন্তু সোমবারের গণসমাবেশ ছিল শুধুই বিএনপির। তবে ১৮ দলের যেসব নেতা আসতে চেয়েছেন, তাদের নিষেধ করা হয়নি।’
সমাবেশে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারবে না ডিএমপি থেকে অনুমতি দেওয়ার সময় এমন কোনো শর্ত ছিল কিনা এমন প্রশ্নে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ডিএমপি থেকে জামায়াত থাকা বা না থাকা নিয়ে কোনো শর্ত ছিল না।’
জামায়াত-হেফাজত বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আহ্বান বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের ভাবনা-চিন্তাগুলো দেশীয় মিডিয়া নিজেদের মত করে প্রচার করেছে। তারা বলেছে- একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। সেজন্য আলোচনা ওপর তাগিদ দিয়েছে। ইইউ সংঘাত, সহিংসতাকে নিরুৎসাহিত করেছে। তাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে আমাদেরও দ্বিমত নেই।’
‘কিন্তু আমরা কার সঙ্গে থাকব, কার সঙ্গে থাকব না। কোনটা আমাদের করা উচিত, কোনটা উচিত নয় জাতিগতভাবে আমরা এটা সিদ্ধান্ত নেবো। আর আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। ইইউ কনসেপটের সঙ্গে আমাদের খুব একটা অমিল নেই, যোগ করেন খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা।
বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করছে এমন সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো আওয়ামী প্রচারণা। এসব গুজবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিরোধী দলকে একটা নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া। জোটের শক্তি ক্ষয় করা। কারণ আমাদের নেত্রীর (বেগম জিয়া) আহ্বানে ৫ জানুয়ারি মানুষ নির্বাচনে ভোট দেয়নি। আর তাই সবকিছু এখন বেগম জিয়ার হাতে, শেখ হাসিনার হাতে কিছুই নেই।’
আগামী মাসে বেগম জিয়া গণসংযোগের উদ্দেশে জেলা সফরে যেতে পারেন বলেও আভাস দেন সাবেক এই ছাত্রদলের সভাপতি।