৬৭ বছর পর সীমানা পিলার স্থাপন

0
128
Print Friendly, PDF & Email

দীর্ঘ ৬৭ বছর পর বাংলাদেশ-ভারতের বিরোধপূর্ণ ফেনীর পরশুরাম বিলোনিয়া সীমান্তে মুহুরীর চরে সীমানা নির্ধারণের জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। এ সীমান্তের মুহুরীর চরে ৪৪টি পিলারের জরিপ কার্যক্রম শেষে স্থাপন করা হয়েছে উডেন (কাঠ) ও বাঁশের পিলার।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রমতে, বিলোনিয়া সীমান্তে মুহুরীর চরে বাংলাদেশ-ভারত সীমানা নির্ধারণের জরিপ কাজ শুরু হয় গত ১৫ জানুয়ারি। ১৮ জানুয়ারি বিকেলে শেষ হওয়ার পর মুহুরীর চরে ৪৪টি পিলারের মধ্যে ৩৫টি উডেন ও মুহুরী নদীর অংশে ৯টি বাঁশের পিলার স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের সদস্যদের সমন্বয়ে এ কার্যক্রম চলাকালে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ফেনী বিজিবি-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মাহমুদুন্নবী, ভারতের বিলোনিয়া সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-৮৯ এর কমান্ডিং অফিসার সঞ্জয় কুমার, ঢাকা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সহকারী জরিপ অফিসার পারভেজ মিয়া ও ভারতের ত্রিপুরা সেক্টর ক্যাম্প অফিসার অভিজাত দাস। তাদের সাথে ঢাকা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ, মো. মনিরুল ইসলাম এবং ভারত ত্রিপুরা সেক্টরের সার্ভেয়ার দেবব্রত ঘোষ ও সঞ্জিব দেব নাথসহ উভয়দেশের কর্মকর্তা ও সহকারীরা উপস্থিত ছিলেন।

ফেনী বিজিবি-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মাহমুদুন্নবী জানান, ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এ অর্জন। ২১৫৯/৪৮ সাব পিলারটাকে বেজলাইন ধরে সার্ভে শুরু করা হয়। দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের ৮২তম বাউন্ডারি সম্মেলন মোতাবেক উডেন পিলার স্থাপন করা হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের ৮৩ তম বাউন্ডারি সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সেখানে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে মুহুরীর চর নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে চরকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও জনসাধারণের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটলেও এতদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে মুহুরীর চরটির ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

সূত্রমতে, বিরোধপূর্ণ মুহুরীর চরটিতে মোট ৯২.১৪ একর জমি আছে। এসব জমির মধ্যে বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে দখলে আছে ৩৫.২৩ একর এবং ভারতের দখলে আছে ০৮.৬০ একর। তাছাড়া বিতর্কিত হিসেবে রয়েছে ৪৮.৩১ একর। ১৯৭৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৩দিন মুহুরীর চর এলাকায় উভয় দেশের জনগণের জমি দখলকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়।

১৯৯৩ সালের ১০ অক্টোবর ভারতের জনসাধারণ অমীমাংসিত ৫২.৫ একরের অংশে চাষাবাদ করলে বাধা দেয় বিজিবি। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে দুই পক্ষই সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মোতায়েন, অস্ত্র ও জনবল বৃদ্ধি করে। এমনকি গুলি বর্ষণ ও পাল্টা গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। গুলি বর্ষণের পর বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর ১৯৯৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি উত্তেজনা হ্রাস পায়।

পরশুরাম মুহুরীর চরের জমির হিসাব (সারাংশ) মোতাবেক নিজকালিকাপুর মৌজায় বাংলাদেশের দখলে ২২.১২ একর, ভারতের দখলে ০১.২৮ একর, অমীমাংসিত জমি ২১.৬৫ একর মিলে সর্বমোট ৪৫.০৫ একর। উত্তর কাউতলী মৌজায় বাংলাদেশের দখলে ১০.২৭ একর, ভারতের দখলে ০৭.৩২ একর, অমীমাংসিত জমি ২৬.৬৬ একর মিলে মোট ৪৪.২৫ একর। বাউরখুমা মৌজায় বাংলাদেশের দখলে ০২.৮৪ একর, ভারতের দখলে নেই, অমীমাংসিত জমি নাই, সর্বমোট ০২.৮৪ একর। সর্বমোট বাংলাদেশের দখলে ৩৫.২৩ একর, ভারতের দখলে ০৮.৬০ একর, অমীমাংসিত জমি ৪৮.৩১ একর। যা সর্বমোট ৯২.১৪ একর।

শেয়ার করুন