মন্ত্রিসভা থেকে বাদ যাওয়ার পর এবার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হককে নিয়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদে (স্বাচিপ)। রুহুল হক আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসক সংগঠনের সভাপতি।
স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির কমপক্ষে ছয়জন নেতা বলেছেন, তাঁরা মনে করেন দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে রুহুল হককে। দুর্নীতিগ্রস্ত কেউ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতৃত্ব দিক, সেটি তাঁরা চান না।
রুহুল হক ১০ বছর ধরে স্বাচিপের সভাপতি। পদ হারানোর ভয়ে তিনি নির্বাচন দেননি বলেও অভিযোগ আছে। চিকিৎসক নেতারা চান রুহুল হক নির্বাচন দিয়ে নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করুন।
স্বাচিপের নেতা-কর্মীদের ভেতরে রুহুল হককে নিয়ে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনিও অবহিত। ‘প্রথম আলো’কে তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রিত্ব যাওয়ায় স্বাচিপের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই খুশি হয়েছেন। বেজার হওয়া মানুষ কম।’
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু বলেছেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে পেশাগত সুনাম যেমন দেখা হয়েছে, রাজনৈতিক নানা বিষয়ও তেমনি বিবেচনায় এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। রুহুল হককে কেন মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি, সেটা আপনারা ভালোই জানেন। তবে স্বাচিপের কাউন্সিল খুব দ্রুত করার প্রস্তুতি চলছে।’
তবে স্বাচিপের মহাসচিব এম ইকবাল আর্সলান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই। তবে এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের নাক, কান, গলা বিভাগের চিকিৎসক মণি লাল আইচ লিটুকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামার সূত্র ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন আ ফ ম রুহুল হকের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। রুহুল হক তাঁর সম্পদের বিবরণীর ভুল তথ্য নিয়ে ইতিমধ্যে একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন।
স্বাচিপ নেতাদের ক্ষোভ: দেশের অন্য পেশাজীবীদের মতো বাংলাদেশে চিকিৎসকেরাও সুস্পষ্টভাবে দুটি ধারায় বিভক্ত। আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসক সংগঠনটির নাম স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা ও বিএমএর সাবেক একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় সংগঠন হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে রুহুল হক নির্বাচন দেননি। বরং স্বাচিপের কয়েকজন বিতর্কিত চিকিৎসককে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করেছিলেন। এ অংশটি নিয়োগ বদলি-পদোন্নতির তদবির করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালের কেনাকাটার কমিশন ভাগাভাগি করত বলেও অভিযোগ আছে। এঁরাই পাঁচ বছর স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এঁদের জন্য পুরো সংগঠনের দুর্নাম হয়েছে।
এ ছাড়া স্বাচিপের একাধিক নেতা বলেছেন, হলফনামায় প্রমাণ হয়েছে রুহুল হকের সম্পদ পাঁচ বছরে ফুলেফেঁপে উঠেছে। শর্তপূরণ না করা সত্ত্বেও তিনি ডজন ডজন মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দিয়েছেন, মেডিকেলের আসন সংখ্যা বাড়িয়েছেন। নির্বাচনের আগে রুহুল হক কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে দেখা গেছে, রুহুল হকের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৭৮২ শতাংশ। এ ছাড়া পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর ছেলে জিয়াউল হক বড় ব্যবসায়ী হয়েছেন। তিনি একটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের লাইসেন্স পেয়েছেন, ওষুধ কোম্পানির মালিকও হয়েছেন। হঠাৎ করে রুহুল হকের সম্পদের এই চিত্র প্রকাশ হওয়ায় চিকিৎসকেরাও বিব্রত।
মন্ত্রী থাকাকালীন রুহুল হককে সংগঠন থেকে সাবধান করা হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে স্বাচিপের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘আমি তাঁকে মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে ঠিকাদারদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখেছি। তাঁকে বারবার নিষেধও করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’
এ বিষয়ে রুহুল হক বলেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। ঠিকাদাররা তাঁদের প্রয়োজনে যেমন অন্য মন্ত্রণালয়ে যান, তেমনি তাঁর মন্ত্রণালয়েও এসেছেন। আদপে তিনি ‘সৎ’ লোক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ ফকির ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন স্বচ্ছ মানুষদের মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়েছেন, চিকিৎসক সংগঠনগুলোতে সেই ধারা অনুসরণ করুন। আমরা দুর্নীতিবাজ কাউকে স্বাচিপে দেখতে চাই না।’