বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা দমনে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় থেকেই কাজ করছে যৌথ বাহিনী। নির্বাচনের পরেও এই অভিযান অব্যাহত রেখেছে র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি সমন্বয়ে গঠিত এই বাহিনী। সাঁড়াশি অভিযানে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। তবে হালনাগাদ বেড়ে গেছে হত্যাকান্ডের সংখ্যা। আর একে ‘বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
মঙ্গলবার ইরান ভিত্তিক রেডিও তেহরান বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বৃদ্ধি
শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
অনলাইন সংস্করণে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার যৌথবাহিনী দিয়ে মানুষ খুন করছে- বিরোধী দলের এমন অভিযোগের মধ্যেই সরকারী বাহিনীর হেফাজতে আরো তিন জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রোববার দিবাগত রাতে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তিনি। তবে, নিহতের পরিবারের দাবি জামায়াতের রাজনীতি করার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে।
মেহেরপুর ডিবি ও সদর থানা পুলিশের এটি দল রোববার বেলা ৩টার দিকে শহরের ইসলামী ব্যাংকের নিচ থেকে তাকে আটক করে। মেহেরপুরের পুলিশ সুপার একে এম নাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আটকের পর রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যায় যৌথবাহিনী। এ সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এ জামায়াত নেতা।
বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধের সময় সড়কের পাশে সরকারি গাছ কাটা, ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের উপর হামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামি ছিলেন তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এদিকে, নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলায় অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী আতিকের (২৬) লাশ সোমবার সকালে জেলার সৈয়দপুর বাইপাস মহাসড়কের ধলাগাছ মোড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে র্যাব-পুলিশ তাকে আটক করে। সে খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর আগে শনিবার নীলফামারী-ডোমার সড়ক থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানির লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি নূরের গাড়িবহরে হামলা মামলার এক নম্বর আসামী ছিলেন।
অপর এক ঘটনায় রংপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত যুবলীগ কর্মী ‘টোকাই শাকিল’ (২৫) এর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকাল ১১টায় নগরীর রংপুর-বদরগঞ্জ সড়কের একটি ব্রিজের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের স্ত্রী কোহেলী বেগম দাবি করেন, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর রেলস্টেশন এলাকা থেকে র্যাব -১৩ ও গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর থানা ও জেলখানায় যোগাযোগ করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবারের সদস্যরা।
আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন রংপুরের পীরগঞ্জ বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদ মন্ডল রেডিও তেহরানকে বলেন, এ সব কারণে তিনি নিজেও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এর অবসান হওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনায় এর আগেও আন্তর্জাতিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ রকম হত্যাকান্ড বন্ধের জন্য বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই সরকার এ ব্যাপারে আরো সতর্কতা অবলম্বন করবে এটাই সবাই কামনা করেন।