রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) আর ডাক বিভাগের গাফিলতির কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি মাত্র ২০০ গজ দূরত্বে প্রাপকের হাতে পৌছতে এক মাসের অধিক সময় লেগেছে। রেজিস্ট্রিকৃত চিঠিটি দেরিতে পৌছানো নিয়ে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠান একে অপরকে দায়ী করেছে।
তথ্য অধিকার বিধিমালা- ২০০৯ অনুযায়ী বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনারের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য গত বছরের ২১ নভেম্বর আবেদন করেন প্রাইমনিউজ.কম.বিডির স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল ইসলাম ফারুক।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এলটিইউ’র পক্ষ থেকে আবেদনকারীর অফিস ৮০, কাকরাইল, ভিআইপি রোডের ঠিকানায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠানো হয়। প্রাপক ও প্রেরকের ঠিকানার দূরত্ব মাত্র ২০০ গজ এবং ঢাকা মহানগর পোস্টাল কোড ১০০০ এর মধ্যেই। এতো কম দূরত্বে চিঠিটি প্রাপকের হাতে পেতে ১ মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। আর এ নিয়ে এলটিইউ কর্মকর্তা রহস্যজনক আচরণ করছেন। তিনি কোনো কাজে ব্যস্ত না থেকেও প্রাইমনিউজ.কম.বিডির প্রতিবেদকের সঙ্গে ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলতেই রাজি হননি।
তথ্য পাওয়ার আবেদনপত্র দিয়ে খোজ-খবর নেয়ার জন্য প্রাইমনিউজ.কম.বিডির প্রতিবেদক এলটিইউ কার্যালয়ে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ কমিশনার কাজী ফরিদ উদ্দীন অফিস স্টাফের মাধ্যমে জানান, আবেদনকারীর ঠিকানায় তথ্য সম্বলিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। উল্লিখিত ঠিকানায় চিঠি সময় মতো না পৌছালে এলটিইউ দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে বার বার যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি নানা অজুহাতে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গত ৭ জানুয়ারির পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই চিঠির বিষয়ে কথা বলার জন্য সশরীরে এলটিইউ’র কমিশনারের সাক্ষাত চান এই প্রতিবেদক। কিন্তু যখনই কমিশনার কার্যালয়ে যাওয়া হয় তখনই তিনি স্টাফদের মাধ্যমে ব্যস্ত আছেন বলে জানান। কিন্তু এরপরও আবেদকারী তথ্য পাওয়ার জন্য হাল ছাড়েননি। প্রতিদিনই একবার করে এলটিইউতে খোঁজ খবর নেন। পরে ১৬ জানুয়ারি এলটিইউ’র কমিশনার কার্যালয়ে গেলে স্টাফ হাবিব জানান, চিঠিটি ডাক বিভাগ থেকে ফেরত এসেছে। এরপর তিনি আবেদনকারীকে হাতে হাতে চিঠিটি বিতরণ করেন।
ডাক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ১৬ ডিসেম্বর কমিশনার অফিসের কর্মচারী সচিবালয় পোস্ট অফিস থেকে চিঠিটি রেজিস্ট্রি করেন। যার নম্বর আর-৩৯৯।
প্রাপকের ঠিকানায় যে রানার চিঠি বিলি করে থাকেন তিনি জানান, চিঠিটি বিলি করার জন্য তার হাতে পৌছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩। রাজধানীর ভিআইপি সড়কের মতো একটি পরিচিত ঠিকানা হওয়া সত্ত্বেও রানার দাবি করেন তিনি ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় এ বছর ২ জানুয়ারি চিঠিটি ডাক বিভাগের ঢাকা মহানগর ফেরত শাখায় পাঠিয়ে দেন। এতো সহজ ঠিকানাও খুঁজে না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই রানার বলেন, এত বড় ভবনে আপনাদের ফ্লাটটি খুঁজে পাইনি। সেজন্য তিনি এটি ফেরত শাখায় পাঠিয়ে দেন। ফেরত শাখা থেকে গত ০৬ জানুয়ারি ডাক বিভাগ চিঠিটি প্রেরকের ঠিকানায় (এলটিইউ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা) পাঠিয়ে দেয়।
ঢাকা জিপিও’র ফেরত চিঠি অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে কোনো রেজিস্ট্রি চিঠি ৩ দিনের মধ্যে প্রাপকের ঠিকানায় বিলি না হলে প্রেরকের নিকট ফেরত পাঠানো হয়। তবে ঢাকা মহানগরীর মধ্যে কোনো চিঠি বিতরণ করতে না পারলে তা আরো দ্রুত প্রেরকের ঠিকানায় ফেরত পাঠানো হয়।
এ সম্পর্কে ঢাকা জিপিও তে ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল এ এস এম ফজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে পরিদর্শক আবুল খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ সম্পর্কে পরিদর্শক আবুল খায়ের জানান, যে কোনো গ্যারান্টিযুক্ত ইমারজেন্সি পোস্ট (জিইপি) করা চিঠি ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাপকের হাতে পৌছাতে না পারলে বা প্রাপককে না পেলে প্রেরকের ঠিকানায় ফেরত পাঠানো হয়। তবে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে যেসব চিঠি পাঠানো হয় তার কোনো নির্ধারিত সময় নেই। ঢাকা মহানগরের মধ্যে সময় মতো বিতরণ না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরত পাঠানোর নিয়ম রয়েছে।
এ চিঠিটি সম্পর্কে তিনি খোঁজ নিয়ে জানান, যেহেতু ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে হরতাল এবং অবরোধ ছিল এ কারণে সেসময় চিঠি বিতরণে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে এরপরও চিঠিটি ৬ জানুয়ারি প্রেরকের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ডাক বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাইমনিউজ.কম.বিডি কে জানান, ডাক বিভাগ থেকে প্রাপকের ঠিকানায় চিঠি বিলি করতে না পেরেই চিঠিটি ২০-২২ দিনের মধ্যে প্রেরকের ঠিকানায় পৌছে দেয়া হয়েছে। যেহেতু সে সময়ে দেশে একটি রাজনৈতিক দলের অবরোধ ছিলো তাই চিঠিটি ফেরত পাঠাতে একটু সময় লেগেছে।
তিনি কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের দায়ী করে বলেন, আমরা ২২ দিনের মধ্যে ফেরত পাঠালেও তারা প্রাপককে চিঠিটি দিতে আরো ১০ দিন দেরী করেছে। এটাও তাদের গাফিলতি।
এদিকে প্রাপক নিজেই প্রতিদিন একবার করে সশরীরে প্রেরকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও দশদিন পর চিঠিটি কেন হাতে হাতে দেয়া হলো সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কমিশনার মো. আবদুল কাফি।
এলটিইউ’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাইমনিউজ.কম.বিডি কে জানান, কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে একটি চিঠি আবেদকারীর হাতে পৌছতে ১ মাসেরও অধিক সময় লেগেছে। এটা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সম্পর্কে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিনার মো. আব্দুল কাফির কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি স্টাফের মাধ্যমে জানান, গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই কথা বলতে পারবেন না।