প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘নিজেদের শক্তির জোর বড় জোর। যেকোনো অবস্থায় সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে আপনারা নিজের শক্তি নিয়ে দাঁড়াবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি। যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করব। সাতক্ষীরা আর রক্তাক্ত থাকবে না।’
আজ সোমবার বিকেলে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেতার সাধ্য নেই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য তিনি মানুষ খুন করেছেন। সাতক্ষীরাকে রক্তাক্ত করেছেন। যারা সাতক্ষীরাকে রক্তাক্ত করেছে তাঁদের রেহাই নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মাটিতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সবার অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। কারও হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না। যার যার ধর্ম সে সে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, সাতক্ষীরায় হামলায় যারা জড়িত তাদের একজনও রেহাই পাবে না। তিনি বলেন, যেকোনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের নিরাপত্তা তাঁর সরকার নিশ্চিত করবে। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যদি বাবার মতো জীবন দিতে হয় তাতেও প্রস্তুত আছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি তিনি বিরোধী দলের নেতার সমালোচনা করেন।
জামায়াতের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে নির্বাচন করেননি খালেদা
শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াতের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে খালেদা জিয়া নির্বাচন বর্জন করেছেন। শুধু তা-ই নয় তিনি নির্বাচনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনের আগে ও পরে হরতাল-অবরোধ দিয়েছেন। মানুষের আয়ের পথ বন্ধ করেছেন। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন।
বিএনপির দুই গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির রাজনীতি দুর্নীতির রাজনীতি। সন্ত্রাসের রাজনীতি। তিনি বলেন, একসময় দেশে স্লোগান প্রচলিত ছিল, ‘বিএনপির দুই গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন তাদের দোসর হলো জামায়াত-শিবির। ’৭১ সালে যারা গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছিল তারা হয়েছে বিএনপির দোসর।
অশান্তি বেগম মানুষের শান্তি দেখতে পারেন না
শেখ হাসিনা বিএনপির নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা দেশে শান্তি আনতে চাই। কিন্তু একজন অশান্তি বেগম আছেন। উনি মানুষের শান্তি দেখতে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘শত বাধা পেরিয়েও নির্বাচন হয়েছে। আমরা সরকার গঠন করেছি। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’ তিনি বিএনপির নেতার উদ্দেশে বলেন, তিনি যেন মানুষের শান্তি নষ্ট না করেন। নির্বাচনে না এসে তিনি যে ভুল করেছেন, তার খেসারত তাঁকে দিতে হবে।
উনার শয়নে-স্বপনে পেয়ারে পাকিস্তান
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, উনি শয়নে-স্বপনে এখনো পেয়ারে পাকিস্তান দেখেন। সে জন্য যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তাঁর এত মায়াকান্না। এত দরদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে বহু চেষ্টা করেছিলাম। ফোন করতে গিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।
এর আগে আজ বেলা সোয়া একটায় হেলিকপ্টারে করে শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় পৌঁছান। এরপর আড়াইটা থেকে তিনি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে জামায়াত-শিবিরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গিয়ে আশাশুনিতে এতিম ছেলেমেয়েদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, কপোতাক্ষ নদ পুনঃ খনন, তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম কাজসহ সাতটি কাজের উদ্বোধন এবং পৌরসভার পানি শোধনাগার, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পসহ চারটি উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান ও পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ‘প্রথম আলো’কে মুঠোফোনে জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাতক্ষীরা সফর নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরসহ জনসভাস্থলের চারদিকে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টহলে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট।