এরা কী আদৌ বাংলাদেশি, প্রশ্ন খালেদার

0
108
Print Friendly, PDF & Email

সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানের নামে যৌথ বাহিনীর হাতে বিরোধী নেতাকর্মী হত্যার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

একই সঙ্গে তিনি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, এসব অভিযানে যারা অংশ নিচ্ছে, তারা আদৌ বাংলাদেশি কিনা? কারণ জনগণের মধ্যে এসব ব্যক্তি নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে।

সোমবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর বিএনপির গণসমাবেশে বক্তৃতাকালে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনীর নামে যা করা হয়েছে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জনগণ বলছে- এরা কী (যৌথ বাহিনীর সদস্যরা) আদৌ বাংলাদেশি। নিজ দেশের বাহিনী কখনো নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর এমন নির্যাতন করতে পারে না।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কাজ করা হয়েছে। সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারা কী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছেন? আপনাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় না আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। দেশের স্বাধীনতা আদৌ আছে?’

এ সময় খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘আপনারা আশেপাশে খেয়াল রাখবেন। আপনাদের সঙ্গে যদি কারো চেহারা না মেলে মনে করবেন তারা ভারতীয়।’

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করেছেন। এখন আপনাদের অনেক বয়স হয়েছে। আপনারা ছাত্র-যুবকদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে বলুন। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধে অংশ নিতে বলুন।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর আমরা আবার স্বাধীনতা হারাতে বসেছি। তবে তা হতে দেওয়া যাবে না। এজন্য আমাদের লড়াই করতে হবে।’

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘অবিলম্বে নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা করুন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। ৫ তারিখের নির্বাচন প্রমাণ করে- নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ১৫৩ আসনে কোনো ভোট হয়নি। জনগণের ভোট ছাড়াই তাদের এমপি বলা হচ্ছে। ১৪৭ আসনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এদের জনপ্রতিনিধিত্ব বলব কী করে? তাই নির্লজ্জ সরকারকে বলব- নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।

আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই দুর্নীতিবাজ সরকারকে না সরালে দেশ ও জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। এই সরকার সবচেয়ে বেশি ভয় পায় দেশের জনগণকে।’

এ সময় তিনি তাদের ক্ষমতাসীন সময়ে বিরোধী দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়নি, একটি গুলিও চালানো হয়নি বলে স্মরণ করিয়ে দেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সংসদে জনগণের ভোটে কেউ নির্বাচিত হয়নি। সংসদে কতগুলো সং বসে থাকবে। বিরোধী দলবিহীন সংসদ। বিরোধী দলের মন্ত্রী তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না তারা আবারো প্রমাণ হলো।’

গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিকদের কারাগারে নেওয়ায় সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এজন্য সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অতি দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে।’

সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব না- প্রধানমন্ত্রীর এমন কথার কড়া জবাব দেন তিনি। বলেন, ‘সংবিধান থেকে বহু হাত নড়ে গেছেন তিনি। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান কাটা-ছেড়া করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে না। তারা উন্নয়নের নামে সম্পদ চুরি করে। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) যে কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন বাদে অধিকাংশই দুর্নীতিবাজ।’

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের দেওয়া সম্পদের তথ্য প্রকাশের পর তারা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, খালেদা জিয়া সেটাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখান।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি ৫ বছর বিরোধী দলে, আপনারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এ থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এ নির্যাতনের সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত রয়েছে। সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’

সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনায় সরকারের নীরবতার কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।

বর্তমান সরকারকে স্বৈরচারের বাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বঘোষিত জাতীয় বেঈমানরা কখনো দেশপ্রেমিক হতে পারে না। স্বঘোষিত বেঈমানদের হাতে দেশ ও দেশের জনগণ নিরাপদ থাকতে পারে না।’

আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয় দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘তারা করিডরের দল। তাদের কেউ রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেনি।’

তিনি বলেন, ‘তাদের (সরকার) ক্ষমতার মেয়াদ স্বল্প। অতি শিগগিরই তাদের বিদায় নিতে হবে। সরকারকে বলব- আপনাদেরও দল আছে। আর সেই দলকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবিলম্বে নির্বাচন দিন।’

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন- তিনি কারো কথার ধার ধারেন না। আমরা কিন্তু জনগণের কথার ধার ধারি। যদিও কেউ কেউ ফোন করলে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে গিয়ে স্যালুট করেন।’

তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘তারাও ডাক দিয়েছিল, আমরাও ডাক দিয়েছিলাম। আপনারা তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে আমাদের ডাকে ভোটকেন্দ্রে যাননি। আজকের এই সমাবেশ আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে। আশা করি ৫ জানুয়ারির শিক্ষা নিয়ে সরকার দ্রুত নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিবে।’

শেয়ার করুন