সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথবাহিনী যে অভিযান চালাচ্ছে তাতে জনগণের অনেক সন্দেহ রয়েছে বলে দাবি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে জনগণকে নির্যাতন করা হচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না, এরা কি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী?’ এসময় সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযানে সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। ৫ তারিখের নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ১৫৩ আসনে কোনো ভোট হয়নি। জনগণের ভোট ছাড়াই তাদের এমপি বলা হচ্ছে। ১৪৭ আসনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এদের জনপ্রতিনিধিত্ব বলবো কী করে ? তাই নির্লজ্জ সরকারকে বলবো, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করেন।’
সারা দেশে গুম, খুন, হত্যা নির্যাতন চলছে এতে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে জনগণের ওপর অত্যাচার চলছে। গুম, খুন করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময়েই ২২ জন নেতাকে গুম করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ করুন। যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে জনগণের ওপর নির্যাতন বন্ধ করুন।’
নির্বাচনের দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রে জনগণ যায়নি। এই যে কুকুর দেখা যাচ্ছে। কুকুর কি তাদের ভোট দিয়েছে?’
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি কার্যকলাপের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই দুর্নীতিবাজ সরকারকে না সরালে দেশ ও জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। এই সরকার সবচেয়ে বেশি এই দেশের জনগণকে ভয় পায়।’ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি বলে স্মরণ করিয়ে দেন খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সংসদে জনগণের দ্বারা কেউ নির্বাচিত নয়। সংসদে কতগুলো সঙ বসে থাকবে। বিরোধী দলবিহীন সংসদ। বিরোধী দলের মন্ত্রী তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না তারা আবারো প্রমাণ দিল।’
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আওয়ামলী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিকদের কারাগারে নেয়ায় সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এজন্য সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন তিনি।
বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘অতি দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে।
সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বো না- প্রধানমন্ত্রীর এমন কথার কড়া জবাব দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সংবিধান থেকে বহু হাত নড়ে গেছেন তিনি। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান কাঁটা ছেড়া করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে না, তারা উন্নয়নের নামে সম্পদ চুরি করে।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনার যে কয়েকজন উপদেষ্টা আছে তাদের মধ্যে কয়েকজন বাদে অধিকাংশই দুর্নীতিবাজ।’ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পদের তথ্য প্রকাশের পর তারা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন খালেদা জিয়া সেটাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখান।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি ৫ বছর বিরোধী দলে, আপনারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এ থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এর সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত রয়েছে। সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর আমরা আবার স্বাধীনতা হারাতে যাচ্ছি। এ জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তিনি বলেন, ‘দেশ রক্ষার জন্য ছাত্র-যুবকদের নির্দেশনা দিতে হবে। আমাদের প্রথম কাজ হলো দেশ রক্ষা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।’
সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যায় সরকারের নীরবতার কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে কারা অভিযান চালিয়েছে তারা বাংলাদেশের ছিল কি না এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।