আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ঢাকাকে নান্দনিকভাবে সাজানো হবে। এজন্য ১১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এছাড়া আরো ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।
রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নুতন সরকারের প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। যাতে ১৩ টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড বিউটিফিকেশন ওয়ার্কস এ্যারাউন্ড মিরপুর শেরেবাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম অ্যান্ড মেজর রোডস অব ঢাকা সিটি ফর আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ টি-২০ বাংলাদেশ-২০১৪’ নামের প্রকল্পটির অধীনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও দুটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে।
একইসঙ্গে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও সাজ-সজ্জার কাজ এবং সুষ্ঠু যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। সরকারের ৯২ কোটি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিলের ২৩ কোটি টাকা নিয়ে মোট ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজগুলো করবে।
প্রায় ২৩ কি.মি. রাস্তার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ২৩.৫০ কি.মি রাস্তার ট্রাফিক সাইন, রোডমার্কিং আলোকায়ন ও বিদ্যুতায়ন এবং ২০.৫০ কি.মি. রাস্তা আলোয় সজ্জিতকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও ডেকোরেশন কার্যক্রম প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান,‘আগামী মাস থেকে টি-২০ বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপে আমি দায়িত্বে ছিলাম। এবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছি। টি-২০ বিশ্বকাপে ঢাকাকে ভালোমতো সজ্জিত করা হবে। নগরীর রাস্তাঘাটকে সজ্জিত করা হবে। এই জন্য প্রকল্পটি পাশ করেছি। আগামীকাল থেকেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ‘মিউনিসিপ্যাল গভরন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস’ নামের অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আওতায় দেশের চারটি নতুন সিটি কর্পোরেশন এবং ২২টি গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভায় ৬০০ কি.মি. সড়ক, ৪১০ কি.মি. ড্রেনেজ লাইন, ১২টি বাস টার্মিনাল, ৪টি ট্রাক টার্মিনাল, ২৬টি কিচেন মার্কেট, ২৬টি হোলসেল মার্কেট, ৩৬টি পাবলিক টয়লেট ও ৬টি পার্ক উন্নয়ন করা হবে। একইসঙ্গে ৫৭০ মিটার ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া, প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪৬টি পৌরসভার ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট দেওয়া হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে এক হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা দেবে। জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। সরকারি খাত থেকে ২৬৩ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১৭৯১ কোটি টাকা মেটান হবে।
১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল (টিএস) স্থাপন প্রকল্পে ৯২৪ কোটি টাকা সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে।
এস্টাবলিসমন্ট অব ৩০ (থার্টি) টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার্স (টিটিসি) হস ডিফারেন্ট ডিস্ট্রিক্টস (সেকেন্ড রিভাইসড)। প্রকল্পেও ৮২৬ কোটি টাকা সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে।
‘সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা অঙ্গ, কৃষি উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি” প্রকল্পের ব্যয় ৪৩২ কোটি টাকা এর মধ্যে সরকারি খাত(জিওবি) ১০৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৩২৪ কোটি টাকা।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সংস্কার (১ম সংশোধিত)’প্রকল্পের ব্যয় ৩১৫ কোটি টাকা, জিওবি ৭৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২৩৭ কোটি টাকা।
‘মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের ২৪৫ কোটি টাকা জিওবি থেকে মেটান হবে। “কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন সড়ক উন্নয়ন (চামড়াঘাট-মিঠামইন অংশ)” প্রকল্পের ৮৯ কোটি টাকাও জিওবি থেকে মেটান হবে।
‘পত্নীতলা-সাপাহার-রহনপুর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ১২৮ কোটি টাকা জিওবি ব্যয় ধরা হয়েছে। ‘কানসাট-রহনপুর-ভোলাহাট সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ৩৩ কোটি টাকা জিওবি খাত থেকে মেটান হবে।
এছাড়া ‘শহীদ মনসুর আলী (পিপুলবাড়ীয়া-সোনামুখী-ধুনট) সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের জন্য ৫৩ কোটি টাকা জিওবি ব্যয় ধরা হয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদিত প্রকল্পসমূহের বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
আজকের একনেক সভায় ৬টি মন্ত্রণালয়ের মোট ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট ৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং অবশিষ্ট চার হাজার ১৪৭ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে মেটানো হবে।
একনেক সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ একনেক এর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিবর্গ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।