অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতের প্রসঙ্গে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। এ জন্য ১৮ দলের ব্যানারে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে এসে তা বিএনপির নিজস্ব কর্মসূচি বলছে দলটি। আর এতে ক্ষুব্ধ বাকি শরিকরা।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার সমাবেশ করবে বিএনপি। ১৮ দলের পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে এই সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সমাবেশ করার অনুমতিও পেয়েছে তারা। এরপর রোববার রাত ৮টায় ৫১ দিন পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় সোমবারের কর্মসূচি ১৮ দলের নাকি বিএনপির? এর জবাবে সংবাদ সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক (দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত) ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, এটা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কর্মসূচি। সমাবেশে খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলার পরপরই ১৮ দলের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নেতারা। তারা জানান, ১৮ দলের সঙ্গে আলোচনা করেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এটা জোটের কর্মসূচি। হঠাৎ করে কর্মসূচি থেকে জোটের শরিকদের বাদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শরিকদের কিছু জানানোও হয়নি। বিএনপির কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
জোটের অন্যমত শরিক জামায়াত ইসলামের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই জানি এটা ১৮ দলের সমাবেশ। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। এখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটা তাদের কর্মসূচি। তারা একাই এই কর্মসূচি পালন করবে, করুক।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের আরেক নেতা বলেন, ‘বিএনপি একা কর্মসূচি পালন করতে চায় এটা আগে জানালেই পারতো। তবে জামায়াত ছাড়া বিএনপি কোনো কর্মসূচি সফল করতে পারে না, এটা সবাই জানে।’
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদের বরাত দিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকরী সুমন বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা সমাবেশে যোগ দিতে প্রস্তুত। সে অনুযায়ী স্যার (অলি আহমদ) নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।’
সমাবেশ তো বিএনপির, এমন কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘১৮ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া জোটের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সমাবেশ বিএনপির হয় কী করে? পরে পরিবর্তন হয়ে থাকলে তা আমরা জানি না।’
এ বিষয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বাংলামেইলকে বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ১৮ দলের নেতাদের সাথে বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছেন। এমনকি আমাদের উপস্থিতিতে ১৮ দলের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি। বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেরা একাই কর্মসূচি করতে পারে। কিন্তু যে কর্মসূচি জোটগতভাবে ঘোষণা করা হয়েছে তা একা কীভাবে করে? সংবাদ সম্মেলন করে এটা বিএনপির কর্মসূচি বলে দিলেই তো হয় না। এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এটা ১৮ দলের কর্মসূচি, আমরা কাল তাতে অংশ নেবো।’
জামায়াতে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের কারণে বিএনপি দেশে-বিদেশে চাপে রয়েছে, কিন্তু তার দায় তো অন্য শরিকরা নিতে পারে না।’
কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটা ১৮ দলের কর্মসূচি হিসেবেই আমরা জানতাম। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়েছি। কিন্তু রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারলাম এটা বিএনপির কর্মসূচি।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কেনই বা তারা একা এই কর্মসূচি করছে তা আমাদেরকে জানানো হয়নি। বিএনপির কর্মসূচিতে আমরা যাবো না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামায়াতকে ত্যাগ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে বিএনপির ঘাড়ে। সরকার বলছে জামায়াতকে ত্যাগ করলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় তারা রাজি। এছাড়াও জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোও। সরকার ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। সেজন্য কৌশলে আপাতত জামায়াতকে ছাড়া কর্মসূচি করতে চায় দলটি। তাই হঠাৎ একা গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
আলাপকালে বিএনপি একাধিক নেতা বাংলামেইলকে জানান, অনেকেই বলছে- জামায়াত ছাড়া বিএনপি অচল, কোনো কর্মসূচি একা সফল করতে পারে না, এজন্যই জামায়াতকে ছাড়তে চায় না। এই গণসমাবেশে লক্ষাধিক জনসমাবেশ ঘটলে যারা এসব কথা বলে তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে যে, বিএনপি কারো ভরসায় রাজনীতি করে না। সমাবেশ সফলে সবরকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমা বিশ্বও জানবে বিএনপি একাই সয়ংসম্পূর্ণ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে কি ছাড়বে না এটা বিএনপির বিষয়। কারো কথায় বিএনপি-জামায়াতের জোট হয়নি ভেঙেও যাবে না।’