১৯৪৯ সালে জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগ তার সকল কর্মকান্ডে জনগণের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করেছে। অথচ সেই দলটি নিষ্ঠুর, নির্দয় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সদ্য হয়ে যাওয়া নির্বাচন হাইজ্যাক করেছে। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের ভোটের অধিকারকে অস্বীকার করেছে। এ নির্বাচনে তথাকথিত বিজয় ছিল পূর্বনির্ধারিত, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে- ৩০০টির মধ্যে ১৫৩ আসনে প্রার্থী জয়ী হওয়ার জন্য একটি ভোটেরও প্রয়োজন হয়নি। এটা যদি পূর্বনির্ধারিত না হয় তা হলে কি? এ নির্বাচনকে পাতানো এবং ফলাফলকে বল প্রয়োগের বিজয়ের খেতাব এনে দিয়েছে। এরপর নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আসে যা যেকোন নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্যে। এ সরকারও গঠন হয়েছে ভোটারদের কোন ধরনের অংশগ্রহণ ছাড়া। আব্রাহাম লিঙ্কনের সংজ্ঞা যদি আমরা বিশ্বাস করি তবে গণতন্ত্র হচ্ছে, জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য। তাহলে ৫ই জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার জনগণের সরকার নয়, জনগণের দ্বারা গঠিতও নয়। এ সরকার জনগণের জন্য কি না তাও কেবল ভবিষ্যতই বলতে পারবে। শেখ হাসিনা যাই করুন না কেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেননি। যদিও তিনি সবসময় দাবি করে থাকেন গণতন্ত্রের জন্য তিনি সংগ্রাম করছেন। সাংবিধানিক ধারবাহিতকতার নামে তিনি এমন একটি নির্বাচনের আয়োজন করেছেন অফিসিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী যে নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট পড়েছে ৩৯ শতাংশ। যা গত নির্বাচনে ৩০০ আসনে পড়া ৮৭ শতাংশ ভোটের তুলনায় অনেক কম। এবারের নির্বাচনে ভোট পড়ার যে হারের কথা বলা হয়েছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভোটের দিন ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় যে চিত্র দেখা গেছে তাতে ভোটের হার কিছুতেই ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি হতে পারে না। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে জনগণের বিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যাওয়া। গত দুই যুগ ধরে তাদের যে বিশ্বাস জন্মেছিল যে, প্রতি ৫ বছর পর পর তারা কোন ধরণের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের মত প্রকাশ করতে পারবেন। এখন এ বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। এটাও প্রমাণ হয়েছে, আমাদের দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের অধীনে কোন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তা আওয়ামী লীগ হোক আর বিএনপি-ই হোক। এখন আমরা একটি মৌলিক সাংবিধানিক প্রশ্ন উত্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছি- ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন কি এক ব্যক্তিক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়নি। সমালোচক হিসেবে নয়, বরং গণতন্ত্রের বন্ধু হিসেবে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে তার হাতে থাকা অসীম ক্ষমতার ব্যাপারে সতর্ক করছি। লর্ড অ্যাকটিন এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছিলেন, ক্ষমতা দুর্নীতির জন্ম দেয় এবং নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ দুর্নীতির জন্ম দেয়। (আজকের ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদক মাহফুজ আনামের লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন থেকে অনূদিত) উৎসঃ মানবজমিন