দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে সাধারন মানুষ। জনগণের ভাবনার প্রতিফলন দেখাতে পারছে না রাজনৈতিক প্লাটর্ফমগুলো। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক এমন অবস্থাতে পৌঁছেছে যে, সেখানে এখন জনভাবনার প্রতিফলনের ন্যূনতম প্রতিচ্ছবিও দেখা যাচ্ছে না।
বিকল্প রাজনৈতিক দলগুলোও হতাশ করেছে জনগণকে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো নতুন দল। এই পরিস্থিতিতে ভারতের আম আদমি পার্টির উত্থানে নতুন পথের স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক জন বাংলাদেশি কেজরিওয়ালকে।
দেশের রাজনৈতিক বৈরিতা, দুর্বৃত্তায়ন নিয়ে এখন প্রচলিত রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে সাধারন মানুষ। এই অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকেই উত্তরনের পথ হিসেবে সামনে নিয়ে আসছেন ভারতের কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টিকে। অনেকে এই আদলে রাজনৈতিক দলও গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে ফেসবুকে পেজ খুলেছেন। নানা নামে ঘুরে ফিরে আসছে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির রুপে বিভিন্ন প্লাটফরম তৈরির চেষ্টা।
হঠাৎ এই আম-আদমি পার্টি গঠনের চেষ্টাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিক আচরণ, দুর্নীতি-সন্ত্রাস এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার প্রতিফলন হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের রেষারেষিতে যে সহিংস ও অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার বিপরীতে পাল্টা কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা দাঁড়াতে পারেনি।
ব্যর্থ হয়েছে বামদলগুলোও। বাম দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তবিক প্রয়োগে তার কাঠামোগত রুপ গঠনে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছেন। এখনো গড়ে তুলতে পারেনি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি। এর বাইরে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও যেসব বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে সেখানেও অগ্রগতি নেই।
যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গড়ে ওঠা গণজাগরন মঞ্চের আন্দোলনও হতাশ করেছে সাধারন জনগণকে। শুরুর দিকে যে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে এই আন্দোলন গড়ে ওঠে, অনেকেই তাকে তারুণ্যের অভ্যুত্থান হিসেবে মন্তব্য করে। সাধারন মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল, গণজাগরন মঞ্চের আন্দোলনে হয়তো রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে দলগুলো। উত্থান ঘটবে সাধার জনগণের রাজনীতি। কিন্তু সে স্বপ্নও ভেঙ্গে যায় একসময়।
দেখা যায়, মঞ্চজুড়ে আওয়ামী লীগের তৎপরতা। রাজনৈতিক পরিচয় বেরিয়ে আসে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারেরও। মানুষ দেখতে পায়, তার আওয়ামী রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। ফলে জনগণ সরে যায়, মঞ্চ হয়ে যায় বিরান ভূমি।
অন্যদিকে সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বেও বাম বিকল্প শক্তির বিকাশ ঘটেনি। বিভিন্ন বাম মোর্চাগুলোও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জনবিক্ষোভ আর সাধারন মানুষের অনুভূতিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
ইসালামপন্থী সংগঠনগুলোও একই ধরনের অবস্থায়। হেফাজত ইসলামের আন্দোলনকে একেবারেই সাধারন মুসলিম অনুভূতির মানুষগুলো প্রথম পর্যায়ে কিছুটা সমর্থন দিলেও পরবর্তীতে দেখা যায় সেই বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর ছায়া।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের আম আদমি পার্টি নতুন প্রেরণা হয়েছে অনেকের কাছে। এরই মধ্যে আম জনতা পার্টি নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করে প্রচারও শুরু হয়েছে। তারা নিবন্ধনের আহবান জানিয়ে ফরম ছেড়েছে। অনেক তরুণই ফরম পূরন করে সমর্থন জানিয়েছে তাদের।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, আসছে মার্চের শুরুতে সাধারন মানুষের দল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হবে। অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা এই দল গঠনের চেষ্টা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
একই প্রক্রিয়া দেখিা গেছে আরো কিছু গ্রুপের মাঝে। যারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা চালিয়ে জনমত যাচাই করার চেষ্টা করছে।