জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদার জাতীয় পার্টি (জাপা)’র মুখপাত্রের দায়িত্ব নিয়েও মিডিয়ার সামনে পার্টির অবস্থান নিয়ে মুখ খুলছেন না। নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন তারা। তাদের নিরবতায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশার মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। গত ১৩ জানুয়ারি রুহুল আমিন হাওলাদার ও জিএম কাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রুহুল আমিন হাওলাদার জাপার মহাসচিব ও জিএম কাদের দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। ওইদিন এক সাংগঠনিক নির্দেশনায় জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে পার্টির চেয়ারম্যানের সকল নির্দেশনা ও দলীয় সিদ্ধান্তের কথা তার পক্ষে এ দুই নেতার মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হবে। অন্য কেউ পার্টির পক্ষে নীতি-নির্ধারণী বিবৃতি বা বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন না। এটা জাতীয় পার্টি এবং পার্টির সংসদীয় দল উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে বলেও নির্দেশনাতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ওইদিনের পর থেকে পার্টির অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কোনভাবেই কথা বলেননি হাওলাদার ও জিএম কাদের। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে দিশেহারা হয়ে পড়বে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এতে দুর্বল হয়ে পড়বে পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা। এ ব্যাপের নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাপার এক যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আমাদের পার্টিতে কখন কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এটা স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। পার্টির একজন যুগ্ম-মহাসচিব হিসাবে এখন পর্যন্ত আমি কোনো সিদ্ধান্ত প্রণয়নে থাকতে পারিনি। কেবল গণমাধ্যমে দেয়া স্যারের বক্তব্যকে অনুসরণ করে চলি আমরা। কিন্তু সিএমএইচে যাওয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পার্টির চেয়ারম্যানের কোন সঠিক বক্তব্য আমরা শুনতে পাই নি। যাদের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাও কোন কথা বলছেন না। এতে আমরা আরো অসহায় হয়ে পড়েছি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এখন জাতির সামনে কথা বলার মত মুখ নেই আমাদের। তাই আমাদের মুখপাত্ররা মুখ খুলছেন না। জাপা নির্বাচন নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জণগণকে যে বিভ্রান্তিতে ফেলাছে, তা নজীরবিহীন। এখন জনগণের উদ্দেশ্যে বলার মত আমাদের কোনো কথা আছে বলে মনে করি না। মিডিয়ার সামনে মুখ না খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে উভয় নেতাই এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। প্রসঙ্গত, গত ২০ ডিসেম্বর উত্তরার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এরশাদ অনড়। আমি নিজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এ নির্বাচনে নেই। এরপর থেকে পার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলেও পার্টির অবস্থান নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। সিএএইমএইচ থেকে এরশাদ ফেরার পর সাংবাদিকরা তার কাছ থেকে দলের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেও তিনি কথা না বলে চলে গিয়েছেন। যেতে যেতে শুধু বলেলেন, বলার কিছুই নেই। এরপর ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকরা কিছু বলার অনুরোধ করলে তা প্রত্যাখ্যান করেন জিএম কাদের। এদিকে গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় এরশাদের মুক্তির দাবিতে দুইদিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথাও জানান হাওলাদার। মুলত এরপর থেকে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সংসদ সদস্য ও দলের মুখপাত্র বনে যাওয়ার পর পার্টির অবস্থান নিয়ে এখন আর কোনো কথা বলছেন না তিনি।