ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোঃ আহছান কবীর তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে দুস্থ মহিলা হিসেবে এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। আহছান কবীরের স্বাক্ষরে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের অনুদান দেয়ার চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু বরাদ্দপত্রে রাবেয়া খাতুনের স্বামীর নাম গোপন করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দুস্থ মুসলিম পুনর্বাসনের উদ্দেশে এ ধরনের মঞ্জুরিপত্র গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুদান শাখা থেকে জারি করা হয়। আর এই অনুদান শাখার সহকারী সচিব হলেন মোঃ আহছান কবীর। মঞ্জুরি প্রদানের চিঠি রাজবাড়ী সদরের ইউএনও বরাবর পাঠানো হয়েছে এবং ইতিমধ্যে তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন এ টাকা উঠিয়েও নিয়েছেন। কিন্তু রাবেয়া খাতুনের স্বামী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আহছান কবীর থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দপত্রে স্বামীর নাম উল্লেখ না করে সেখানে পিতার নাম জাবেদ আলী মোল্লা ও মাতা আমেনা বেগম, গ্রাম কামালপুর, রাজবাড়ী সদর লেখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, এটি অবশ্যই প্রতারণা। বিশেষ করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি এমন প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন না। এটা অসদাচরণের শামিল। তারা বলেন, বিধি মোতাবেক হলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরাও অনুদান পেতে পারেন। কিন্তু এভাবে কেন? তারা জানান, শুধু আহসান কবীর নন, এভাবে মন্ত্রণালয়ের কতিপয় প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও কর্মচারী নামে-বেনামে বিভিন্ন বরাদ্দ নিয়েছেন। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, আসলে ব্যক্তিপর্যায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের কোনো বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম ছিল না। শুধু নওমুসলিমদের জন্য এ ধরনের অনুদান দেয়ার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সদ্য বিদায়ী সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাজাহান মিয়ার এপিএস সৌমেন্দ্র লাল চন্দ্র শৈলেন ব্যক্তিপর্যায়ে এ ধরনের বরাদ্দ চালু করেন। শুধু তাই নয়, তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, এমনকি বরাদ্দ প্রদানের পত্রে প্রতিমন্ত্রীর ফ্ল্যাক্সো সিল ব্যবহার করতেন। কিন্তু মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের এ ধরনের সিল ব্যবহারের নিয়ম নেই। তারা জানান, এ সুবাদে প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরের চরম অপব্যবহার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর অগোচরে তার ফ্লাক্সো সিল ব্যবহার করে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মিলে বহু বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হলে এর প্রমাণ মিলবে। তারা বলেন, ব্যক্তিপর্যায়ের অনুদান দেয়ার জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি।
এদিকে স্বামীর নাম গোপন করে স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আহছান কবীর যুগান্তরকে বলেন, তার স্ত্রী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই তার চিকিৎসার জন্য এভাবে বরাদ্দ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এভাবে শুধু তিনি একা নন মন্ত্রণালয়ের অনেকে বরাদ্দ নিয়েছেন। এর বেশি তিনি আর কোনো কথা বলতে চাননি।
ফ্লাক্সো সিল অপব্যবহার করার বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য সোমবার সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাজাহান মিয়ার এপিএস সৌমেন্দ্র লাল চন্দ্র শৈলেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ব্যক্তিপর্যায়ে অনুদান বরাদ্দে এ রকম অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ রকম একটি ঘটনা এখানে ঘটেছে। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা প্রতীয়মাণ হওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিস্তারিত তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, সহকারী সচিব আহছান কবীরের নিজ জেলা চাঁদপুরের মতলব। কিন্তু তিনি স্ত্রীর নামে অনুদান দেয়া ছাড়াও তার শ্বশুরবাড়ি রাজবাড়ী সদর এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন নামে অসংখ্য বরাদ্দ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন অনুদান শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তবে তার গুরুতর এই অনিয়মের বিষয়টি সম্প্রতি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাকে অনুদান শাখা থেকে বদলি করে মন্ত্রণালয়ের সংস্থা শাখায় দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনুদান শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার হোসেন ও পিওন আশরাফুল আলমকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অনুদান শাখার সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়নি।