পিছু হটবে না বিএনপি

0
113
Print Friendly, PDF & Email

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে ‘সমঝোতা’ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়েই যাবে বিএনপি। দলটি মনে করছে, সরকার গায়ের জোরে ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন করে ফেললেও এর মাধ্যমে গঠিত সরকার দেশে-বিদেশে কোনো বৈধতা পাবে না। আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক নানা পদক্ষেপে এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে যখন সরকার পদত্যাগ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্দলীয় নিরপে সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সাথে এবার নির্বাচন বাতিলের দাবিও যুক্ত হবে। এ দাবিতে জানুয়ারি মাসজুড়েই আন্দোলন চলবে। জনমত সৃষ্টি করতে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কর্মসূচি পালনেরও চিন্তাভাবনা চলছে। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হলে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার দলের সর্বশেষ অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন। তার আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে করণীয় নির্ধারণ করবেন তিনি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ইতোমধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। একই সাথে তারা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
বিরোধী দলের প্রবল ‘আন্দোলন ও রক্তপাতের’ মধ্য দিয়ে নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিএনপি এখন কী করবে তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলনে থাকায় বিএনপির তৃণমূলে কিছুটা হতাশাও দেখা দিয়েছে। তবে শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতারা একমত যে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে ফলাফল বুমেরাং হতো। বিরোধী দলেই থাকতে হতো বিএনপিকে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। সরকার ক্ষমতার জোরে ভোটার ছাড়াই নির্বাচন করেছে। এ নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও বৈধতা পাবে না।
সমঝোতা ছাড়া দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের দুই শতাধিক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার, জেল খাটছেন সারা দেশে ১০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী। টানা হরতাল-অবরোধে দেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। জনজীবনেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, একতরফা নির্বাচন করে ফেলায় এই সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। তারা আর্থ-সামাজিক স্বস্তির জন্য বিরোধী দলের সাথে এই মুহূর্তে সমঝোতা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখছেন না।
জানা গেছে, আন্দোলন কর্মসূচি লাগাতারভাবেই চালিয়ে যাবে বিএনপি। সরকারের কঠোরতায় এ পথ থেকে তারা পিছপা হবে না। সারা দেশে ডাকা রেলপথ, নৌপথ ও সড়কপথ অবরোধ আপাতত চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর সাথে বিরতি দিয়ে হরতালও চলবে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। এ অবস্থান থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ বিরোধী দলের নেই।
গতকাল লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আন্দোলনে যার যার অবস্থান থেকে সবাই সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতিটি বাড়িকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করুন। একাত্তরে আমরা এভাবেই দেশকে হানাদারমুক্ত করেছিলাম। সেই সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। আর আজকের এই সংগ্রাম সার্বভৌমত্ব রার। সেই সংগ্রাম ছিল দেশকে হানাদার-মুক্ত করার। আর আজকের এই সংগ্রাম দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার।’
বিএনপি মনে করছে, ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে গেলে আগামী তিন থেকে পাঁচ মাসে একটি ‘ফল’ পাওয়া যাবে। প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে এ নির্বাচন কোনোভাবেই জনগণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ফলে সরকার প্রতিনিয়ত চাপে থাকবে। যার ফলে সরকার আগামী এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে বলে তারা আশাবাদী। বিএনপির এই প্রত্যাশার সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ের ‘চাহিদার’ও মিল রয়েছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন