নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী আয়েশা ফেরদৌস ওরফে আয়েশা আলীর সমর্থকরা স্থানীয় ছাত্রলীগের আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেছে। এছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলাও চালানো হয়েছে। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চালানো এ সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, রির্টানিং অফিসার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই উপজেলার আফাজিয়া বাজারে ছাত্রলীগের আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালায় আয়েশা আলী ও তার স্বামী মোহাম্মদ আলীর সমর্থক নেতাকর্মীরা। এসময় ওই কার্যালয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ হামলায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও হাতিয়া ডিগ্রি কলেজ সভাপতি দেলায়ার হোসেন দিনাজ উদ্দিন, মেহেরাজ উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম রাজু, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর, উপজেলা ছাত্রলীগ সদস্য রুবেল।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগে যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাংলামেইলকে জানান, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের আফাজিয়া বাজারস্ত চরঈশ্বর, নলচিরা ও সুখচরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আয়েশা আলী ও তার স্বামীর ডাকাত বাহিনী সশস্ত্র আক্রমণ চালায়। এসময় কার্যালয়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেছে তারা। এতে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের ভয়ে অনেক নেতাকর্মী বাড়ি ছাড়া রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, রোববার রাতে কুখ্যাত নৌডাকাত কাজল ওরফে কাজল সেডের নেতৃত্বে মুরাদ, দিদার ও ওহাবসহ একদল সশস্ত্র বাহিনী উপজেলার চরকিং ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য মনির উদ্দিনের ভৈরব বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় ওই দোকান থেকে তারা তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
সোমবার সকালে আফাজিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই স্বপন ঘটনার তদন্ত করতে সরেজমিনে এলে তার সামনেই মনির উদ্দিনের বাড়ি আক্রমণ করে ওই সন্ত্রসীরা। এসময় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। আহতদের ৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- গৃহকর্মী ফর্সা বেগম, নুর নাহার বেগম, প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রথান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন, আমজাদ হোসেন, মন্নান হোসেন।
এছাড়া, প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন- জামাল উদ্দিন, আফসার উদ্দিন, আব্দুর রহিম, হানিফসহ কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎস্যা দেয়া হয়েছে।
একই সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য শাহজাহানের মুদি দোকানে হামলা চালিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী বাহিনী।
উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙ্গা বাজারে বীমা কর্মী ও যুবদল নেতা রফিকুল ইসলামের অফিস ও বাড়িসহ একাধিক আওয়ামী লীগের বাড়িঘরেও আক্রমণ করেছে আয়েশা আলীর ক্যাডাররা।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আহসান উল্যাহ বাহার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আয়েশা আলীর স্বামী মোহাম্মদ আলীর সন্ত্রাসী বাহিনী, ইয়াছিন আরাফাত ও তার ভাতিজা মুন্সিয়া চোরা এবং মহিউদ্দিন ডাকাত বাহিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা চালাচ্ছে। তাদের ভয়ে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বর্তমানে বাড়ি ছাড়া। আগের মতোই আয়েশা আলীর স্বামী তার ডাকাত বাহিনী দিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। নদীতেও ডাকাতি চালানো হচ্ছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্বা মহিউদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, প্রতিবছর একজন ডাকাত বাহিনীর সরদারকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে পাই। নির্বাচিত হয়ে তারা উপকূলে সাধারণ ভূমিহীনের পাশাপাশি প্রতিবাদী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপরও তাণ্ডব চালায়। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই আয়েশা আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মীদের ওপর তার ডাকাত বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, জাহাজমারা, বুড়িরচর, চরঈশ্বর, তমরদ্দি, নলচিরাসহ বিছিন্ন চরাঞ্চলে তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচন পরবর্তী এ সহিংসতামূলক ঘটনা ব্যাপারে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে রাব্বি বাংলামেইলকে বলেন, ‘নির্বাচনেরর পরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ও টুকটাক সংঘর্ষের ঘটেছে। তবে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই।’