বাংলাদেশের একতরফা দশম সংসদ নির্বাচনকে ‘অদ্ভূত নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রতিযোগিতার অভাবে একটি অদ্ভূত নির্বাচন হলো। বিশেষ করে বাংলাদেশে গতিশীল গণতন্ত্রের যে ঐহিত্য রয়েছে সেই বিবেচনায়। ৩০০ আসনের সংসদে সরকারি দলের প্রার্থীরা অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা ভোটে জয়ী হয়ে বসে ছিলেন। এসব আসনে ভোট হয়নি। এর ফলে ৪ কোটি ৮০ লাখ ভোটারকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি।’
রবিবারের ওই নির্বাচনে শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই সবচেয়ে কম ভোট পড়েনি, সম্ভবত কম ভোট পড়ার হিসেবে এটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলেও এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে না আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ। শুধু ভারত এবং ভূটান নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।’
‘লো টার্নআউট ইন বাংলাদেশ ইলেকশনস এমিড বয়কট অ্যান্ড ভায়োলেন্স ( বয়কট ও সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচনে নগণ্য উপস্থিতি)’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবারের ওই নির্বাচনে ‘ভোটারবিহীন কেন্দ্রগুলোতে’ কালো পোশাক পরা বিশেষ বাহিনী এবং সৈনিকদের টহল দিতে দেখা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশ।
পত্রিকাটির ঢাকা সফরত সাংবাদিক অ্যালেন ব্যারির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচন যতই ঘণীয়ে আসছিল বিরোধী দলগুলো ততই ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে রাখার প্রচারণা শুরু করে এই আশায় যে সরকার এই নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবে।’
বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি মনে করি তথাকথিত এই নির্বাচন জনগণ স্পষ্টভাবে এবং দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে আওয়ামী লীগ আপস করবে বলে মনে হচ্ছে না। এতে বলা হয়, ‘নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপস করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, নতুন সরকারের ম্যান্ডেট হবে দুর্বল। তবে এখন সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ নেতারা এজন্য বিএনপিকে দীর্ঘ পূর্বশর্ত দিয়েছেন। যেমন সহিংসতার নিন্দা করা, দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট না করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসা।’
আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আপনাকে বুঝতে হবে যে আওয়ামী লীগের মত একটি দল আরেকটি দলের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে না। আমরা বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে ভবিষ্যতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য উভয়পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। আমি আপনাকে কোনো তারিখ দিতে পারছি না। আমি আপনাকে কোনো (সুনির্দিষ্ট) সময় দিতে পারছি না।’