দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার সকাল থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী ১৮ দল। আর নির্বাচন সফল করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখন সব দলের অংশগ্রহণে যত দ্রুত আরেকটি নির্বাচন হয় ততই মঙ্গল, নয়তো এই সংকট আরো বাড়বে। সোমবার জার্মানির সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক রোববারের নির্বাচনের পর সন্ধ্যায় এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, একই সঙ্গে লাগাতর অবরোধও চলবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা ভোটকেন্দ্রে যাননি। তারা এর মধ্য দিয়ে অবৈধ সরকারকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনী সহিংসতায় বিএনপি-জামায়াতের ২১ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বিএনপি-জামায়াতের ডাকে সাড়া দেয়নি দেশের মানুষ। তারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত আপ্রাণ চেষ্টা করেছে এই নির্বাচন বানচাল করতে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।
আর দেশের সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই নির্বাচন দিয়ে সরকার এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই সরকারকে দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক, সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। আর তার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে খুব দ্রুত সংলাপ শুরু করে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে সমঝোতায় আসতে হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর যেন না হয়।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের উচিত হবে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য এখনই একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এজন্য ২৪ জানুয়ারির পর নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত বসে থাকা ঠিক হবে না। তবে তিনি মনে করেন শুধু সরকার নয়, বিরোধী দলকেও তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। সহিংসতা, হরতাল অবরোধ বাদ দেয়ার সঙ্গে জামায়াতের ব্যাপারেও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপি পরিষ্কার অবস্থানে না গেলে বিএনপিকে আস্থায় নেবে না সরকার।
রাজনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন চায় বিদেশি বন্ধুরাও। তারা এখন দেখবেন সরকার এ ব্যাপারে কি উদ্যোগ নেয়। তিনি বলেন, সরকারও বার বার বলেছে এটা সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। এখন এই আলোচনা কবে শুরু হয় তাই দেখার বিষয়।
উল্লেখ্য, দশম সংসদ নির্বাচন নিবন্ধিত ৩৭ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল বর্জন করে। অংশ নেয় শাসক দল আওয়ামী লীগসহ ১২টি দল। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ব্যাপক সহিংসতা এবং কম ভোটারের উপস্থিতিতে ১৪৭টি আসনে রোববার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।