“জনমেও দেহি নাই এই ভোড। হুনছি তিনজন প্রার্থী খারাইছে। প্রার্থীরা কেউ আমাগো এলাকায় একদিন আইয়া কইলেনা- আমারে ভোট দিয়েন, আমি আমনেগো লইগ্যা এই এই কাম করমু। একজন প্রার্থীর চেহারাও এই এলাকার মানুষ দ্যাহে নাই”- কালের কণ্ঠ অনলাইনকে এসব কথা বললেন আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মোল্লার স্ট্যান্ড বাজারসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান শরীফ (৮০)।
আজ রবিবার সকালে আব্দুল মান্নানের দেখা মেলে আউলিয়াপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশেই। এ সময় তিনি আরো বলেন, “য্যারা ভোডের আগেই আমাগো খোঁজ লইতে আইলে না হ্যাগোরে ভোড দেলে আমাগো আর খোঁজ লইবে না। বাবা এই লইগ্যাই আমাগো এলাকার মাইনসে ভোড কেন্দ্রে যায় নাই। ভোড দেওনের লইগ্যা কেউর কোন আগ্রহ নাই। আমিও ভোড দিমু না।”
এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাত/আটজন স্থানীয় ভোটার মান্নান শরীফের কথাকেই সমর্থন করলেন। তখন সকাল ৯টা। একশ’ গজ দূরে আউলিয়াপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে ওই ভোটকেন্দ্রে ১৯ শ’ ৮৭ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৩টি। সর্বশেষ বিকেল ৪টায় ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৫৯টি। দুর্বল প্রচারণা এবং সব দলের অংশগ্রহণ না থাকায় পটুয়াখালী-১ ও ৩ আসনের কম ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে পটুয়াখালী-১ আসনের কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটারশূন্য দৃশ্য দেখা গেছে। কোন কেন্দ্রেই ভোটারদের লাইন ছিল না। দুয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজনকে এসে ভোট দিতে দেখা গেছে। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শহরের পশ্চিম কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ২৭ শ’ ৪৪ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৪টি। সকাল ১০টায় আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভোটকেন্দ্রে ২২ শ’ ২৭ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫০টি।
সেহকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ৪১ শ’ ২২ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ভোট পড়েছে ২৬০টি। পটুয়াখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে দুই হাজার ৭৮ ভোটের মধ্যে ২৮৯টি ভোট পড়েছে। দুপুর ১২টা ১মিনিটে পাওয়ার হাউজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা ২৫ শ’ ৩৫ ভোটের মধ্যে ২০৩টি ভোট দিয়েছে। ১২টা ১৭ মিনিটে উত্তর কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ৩৬ শ’ ৩৩ ভোটারের মধ্যে ১৭৩ ভোট দিয়েছেন ভোটার।
দুপুর ১২টা ৪২ মিনিটে কার্তিকপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ২২ শ’ ১৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৫০টি। এদিকে, দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে পটুয়াখালী-১ আসনের দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির চিত্র একই রকম দেখা গেলেও ২৩ শ’ ৩৯ ভোটের মধ্যে তখন ভোট পড়েছে ১৬১৫টি। জানা গেছে ওই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুহুল আমিন হাওলাদার।
উল্লেখ্য যে, এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুহুল আমিন হাওলাদার, জাসদ প্রার্থী এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পটুয়াখালী -১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) আসনে এই তিন প্রার্থী মোট তিন লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৫ ভোটের বিপরীতে লড়েন। কম ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এ আসনের ১৪৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ ছাড়া পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে দুই লাখ ৫১ হাজার ৮৩৭ ভোটের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তিনজন প্রার্থী। এরা হলেন: আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ খ ম জাহাঙ্গীর হুসাইন, জাসদ সমর্থিত অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত এবং বিএনএফ সমর্থিত এম ওয়াই এম কামরুল ইসলাম বাবু। কম ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এ আসনের ৯৭টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।