ভোট কেন্দ্রে সর্তক প্রহরায় নিরাপত্তা বাহিনী। বুথের ভেতরে ভোটগ্রহণে প্রস্তুত নির্বাচনী কর্মকর্তারা। কিন্তু যাদের জন্য এতো আয়োজন, সেই ভোটারদের দেখা নেই। ভোটারের প্রতীক্ষায় বসে আছেন কর্মকর্তারা। ভোটকেন্দ্রগুলো যেন খাঁ খাঁ করছে।
এ চিত্র রাজধানী ঢাকার।
সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ঢাকার বেশিরভাগ কেন্দ্রই ভোটারশূন্য।
ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম ঘণ্টার পরও কোনো কোনো কেন্দ্রে মাত্র ১টি ভোট পড়েছে। আবার কোনো কোনো বুথে তিন ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনি।
সাহারার আসনে আড়াই ঘণ্টায় ১৪ ভোট: ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরার নবাব হাবিবউল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে আড়াই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ১৪টি। এখানে ছয় বুথের তিনটিতে কোনো ভোটই পড়েনি। এটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আসন। তিন কেন্দ্রে মোট ভোট সাড়ে ৮ হাজার।
উত্তরায় দেড় ঘণ্টায় ৫ ভোট: ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরা রাজউক মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে প্রথম দেড় ঘণ্টায় মাত্র ৫টি ভোট পড়েছে। চারটি বুথ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। সব মিলিয়ে ভোটার আট হাজারেরও বেশি। দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, সাড়ে নয়টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে মাত্র পাঁচজন ভোটার ভোট প্রয়োগ করেছেন। ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম।
যাত্রাবাড়ীতে দেড় ঘণ্টায় ৯ ভোট: যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টায় মাত্র ৯ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রের ভেতরে তেমন ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই। তবে বাইরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রিজাইডিং অফিসার জানান, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মাত্র ৯টি ভোট পড়েছে।
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ মিনিটে ১ ভোট, দ্বিতীয় ভোট আধা ঘণ্টা পরে: মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (বালিকা শাখা) ভোট কেন্দ্রে সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও প্রথম ভোট কাস্ট হয়েছে ৮টা ৫০ মিনিটে। ২য় ভোট দেয়া হয় আরো আধাঘণ্টা পর। এমতাবস্থায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাই সহকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্পে ব্যস্ত।
একই চিত্র সেনপাড়া আদর্শ স্কুল কেন্দ্রে। ভোট শুরু হওয়ার আধাঘণ্টা পার হলেও কোনো ভোট কাস্ট হয়নি। প্রায় একই রকম পরিস্থিতি মিরপুরের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে। সকাল ৯টার পর ভোটাররা কিছুটা আসতে শুরু করে। তবে তা একেবারেই কম। কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন বয়সী ভোটাররা কেন্দ্রে আসলেই ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা একটু নড়েচেড়ে বসেন।
যারা ভোট দিতে আসছেন তারা মূলত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
সেনপাড়া কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে একজন নিজেকে পরিচয় দিলেন স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, তিনি যুব মহিলা লীগের মিরপুরের পরিচিত নেত্রী। নাম হেপী। আরটিএনএন’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বিএনপি না থাকায় নির্বাচনে কোনো আমেজ নাই। আমি ভোট দিতে এসেছি নাগরিক কর্তৃব্য হিসেবে।’
আবদুর রহিম নামের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘আমাকে জোর করে ভোট দিতে রুবেল (স্থানীয় যুবলীগ নেতা) নিয়ে এসেছেন। ভোট দিতে না আসলে আমি এখানে (মিরপুর) ব্যবসা করতে পারব না।’
সকাল ৯টায় নিজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার। জয়ের ব্যাপারে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শীত থাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি এখনো কম। বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যাও বাড়বে।’
এদিকে, ঢাকা-১৭ আসনে মহাখালী এলাকার তিনটি কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় মাত্র ১০টি ভোট পড়েছে। মহাখালী মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে মোট ভোটার ২০৫৫ জন। এ কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় ৪টি ভোট পড়ে বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার মাজহারুল ইসলাম।
একই এলাকায় আবদুল হামিদ দর্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে দুটি ভোট কেন্দ্র। এর একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শাহ আলম জানান, প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে তিনটি। ভোটার আছে ২০৮১ জন। অপর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শ্রী সুশীল জানান, ২০৮৫ ভোটের মধ্যে তিনজন ভোট দিয়েছেন প্রথম দুই ঘণ্টায়।
ঢাকা-১৫ আসনের মিরপুর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখার একটি কেন্দ্রে প্রথম তিন ঘণ্টায় মাত্র ১৭টি ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রের ৫টি বুথের মধ্যে ১১টা পর্যন্ত একটি বুথে ৫, অন্যটিতে ১০, অপর দুটিতে ২টি করে ভোট পড়েছে।
এ এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাছ উদ্দিন মোল্লার এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারি দলের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারের লোকজন তার এজেন্টদের বের করে দেয়।