বিরোধিতা দমনে জরুরি অবস্থা দিতে পারেন হাসিনা : আনন্দবাজার পত্রিকা

0
101
Print Friendly, PDF & Email

বিরোধিতা দমনে হয়তো বিকল্প হিসেবে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন শেখ হাসিনা। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে আজ এ খবর জানিয়েছে। তবে জরুরি অবস্থা স্বল্পমেয়াদি বিকল্প বলেও উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি।
‘১০০ স্কুল পুড়ল, আজ নির্বাচন ও পারে’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়, শাসক দল বুঝেছে একপেশে নির্বাচনে পেট্রল বোমা, ককটেল হানার ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে মানুষকে ভোটের লাইনে টেনে আনা কষ্টকর। আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচন ও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই গিয়েছে। ভোটের হার কম হলে সেই প্রশ্ন খোঁচা দেবে সাধারণ মানুষকেও। এভাবে সরকার গড়লেও তা পরিচালনা করা যে কম ঝক্কির হবে না, এখন থেকেই তা টের পাচ্ছেন শেখ হাসিনার দল। দেড় মাসের হরতাল-অবরোধে ব্যবসা বাণিজ্য লাটে উঠেছে। দেশের মূল আয়ের সংস্থান হয় যে পোশাক রফতানি শিল্প থেকে, সেখানেও বরাত কমে তলানিতে ঠেকেছে। বিদেশী বিনিয়োগও মুখ ফেরাচ্ছে। তার ওপর বিরোধীদের হিংসাত্মক অসহযোগ চলতে থাকলে মানুষের যাবতীয় অসন্তোষ তখন সরকারের দিকেই ধাবিত হবে। সে ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি করে বিরোধিতা দমনের বিকল্প হয়তো বাছতে হতে পারে হাসিনাকে। কিন্তু সে-ও স্বল্পমেয়াদি বিকল্প। আওয়ামী লীগের এক নেতার কথায় ‘জরুরি অবস্থা ইন্দিরা গান্ধীকেও সরকার থেকে উৎখাত করেছিল। সে অবস্থা কখনওই চাইবেন না হাসিনা।’ বিষয়টি বুঝেছেন বলেই সব পক্ষকে নিয়ে অচিরেই আরো এক বার নির্বাচন করার কথা বলতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। অশান্তির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার সেটাই যে দীর্ঘমেয়াদি পথ, মানুষও তা বোঝেন। আর সে জন্যই তাদের হা-হুতাশ সব পক্ষের অংশগ্রহণে কবে হবে সেই পরের নির্বাচন!
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বুথ হবে স্কুলে স্কুলে। সে জন্য আগুন জ্বালিয়ে, বোমা মেরে বাংলাদেশের ২০টি জেলার একশোরও বেশি স্কুল তছনছ করে দিল ভোট বর্জনের ডাক দেয়া খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার শরিক জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা।
রাত পোহালেই ভোট। বুধবার থেকেই লাগাতার অবরোধ চলছিল। তার মধ্যে শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালও ডেকেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয় স্কুলে স্কুলে হামলা। সাথে পথচলতি যানবাহনে পেট্রল বোমা ছুড়ে আগুন লাগানো। এক দিকে কনকনে ঠাণ্ডা, তার মধ্যে এই আতঙ্কের পরিবেশ। ভোটের পরিচিত উৎসবমুখর ছবিটাই গিয়েছে হারিয়ে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের আলোচনায় যদি ভোটের কথা ওঠেও, তা অন্য ভোটের কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জানিয়েছেন, বিরোধীরা এগিয়ে এলে মাস কয়েক পরে সবাইকে নিয়ে ফের ভোট হতে পারে। আরো এক বার মানুষ নতুন সরকার বেছে নেবেন। শুক্রবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের ও শনিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মুহিত মালও সেই ভোটের কথাই বলেছেন। মানুষেরও যেটুকু কৌতূহল, তা এখন সেই পরের ভোট নিয়েই। স্বাভাবিক। কারণ, এই ভোটে যে অশান্তি ঘুচবে না, বরং বিরোধী পক্ষের হরতাল-অবরোধ নতুন মাত্রা। জীবন-জীবিকা অতিষ্ঠ করে তুলবে, সবাই তা বোঝেন।
কিন্তু সব বুঝেও এই একপেশে নির্বাচনে কেন গেল আওয়ামি লিগ? প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি গণতন্ত্র ও সংবিধানের শাসন সমুন্নত রাখতেই এই নির্বাচন করতে হচ্ছে। ২৪ জানুয়ারি সংসদ ও সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে নতুন সদস্যদের নির্বাচন করাটা বাধ্যবাধকতা। হাসিনার সাফ কথা, ২০০৬-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই সেনাদের সাথে নিয়ে অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেছিল। এ বার তাই কোনোভাবেই কোনো অনির্বাচিত শক্তিকে ক্ষমতা ছাড়া হবে না। বিশ্বের সব গণতন্ত্রে সরকারকে রেখেই নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও হবে। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থেকেই নির্বাচন বর্জন করে হরতালের পথে হেঁটেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। ‘সাজানো’ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আর্জি জানিয়ে শনিবার ইউটিউবে একটি বার্তা প্রকাশ করেছেন লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। নির্বাচন প্রতিরোধের ডাকও দিয়েছেন তারেক।
মন্ত্রীরা অবশ্য ভোটারদের ডাকছেন। প্রধানমন্ত্রীও সবাইকে ভোট দেয়ার আর্জি জানিয়েছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হচ্ছে ১৪৭টিতে। ১২টি দল ও নির্দল মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯০ জন প্রার্থী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, আগুন দেয়া বুথগুলির বেশির ভাগকেই ফের গুছিয়ে নিয়ে ভোট নেয়া হবে। ভোটারদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে হিংসার বিরাম নেই। শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু অফিসও জ্বালিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। শনিবার সন্ধ্যায় রংপুর, নীলফামারি ও টাঙ্গাইলের কয়েকটি বুথে হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে জামায়াত কর্মীরা। গাইবান্ধায় ভোটকর্মীদের নৌকায় হানা দিয়ে ব্যালট বাক্স ও ভোটের কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু পুড়ে যাওয়া একশো স্কুল? শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মতে, ভোটের সাথে সম্পর্ক নেই এই স্কুল পোড়ানো অভিযানের। একাত্তরে যে শক্তি স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, সেই মৌলবাদী শক্তিই এই কাজ করেছে। নাহিদ বলেন, ‘এ ভাবে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেই তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চায়।

উৎকণ্ঠা নিয়েই ভোটের টানে ঘরে বাংলাদেশীরা
‘উৎকণ্ঠা নিয়েই ভোটের টানে ঘরে বাংলাদেশীরা’ শিরোনামে অপর এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার প্রত্রিকা লিখেছে, অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট হচ্ছে না। প্রধান বিরোধী বিএনপি-জোট বর্জন বয়কট করেছে। নজিরবিহীন অশান্তি চলছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে।
তবুও শনিবার দিনভর ভোট দিতে দেশে ফিরলেন ভারতে আসা কয়েকশো বাংলাদেশী। যদিও আদৌ ভোট দিতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নন। বরং আশঙ্কায় বুক কাঁপছে অনেকেরই।
চোখে-মুখে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত পার হচ্ছিলেন সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া-ঝাউডাঙার গোপালচন্দ্র ঘোষ। নদিয়ার ফুলিয়ায় বোনের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। ফেরার সময়ে তিনি বলে গেলেন, ‘ভোটটা দিতে হবে, তাই ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু বেরিয়ে যদি দেখি হিংসা ছড়িয়েছে, তা হলে ভোট না দিয়ে বাড়ি ঢুকে পড়ব।’
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এ দিন থেকেই লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী। ৪৮ ঘণ্টা হরতালও ডাকা হয়েছে। দেশ জুড়ে সেনা মোতায়েন করেও স্কুলে আগুন লাগানো, বাসে-ট্রাকে পেট্রল-বোমা ছোড়া আটকানো যায়নি। পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ হতে পারে, দিন কয়েক আগে চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে আসার সময়েও তা ভাবতে পারেননি খুলনার বছর পঞ্চাশের আখতারুজ্জামান। এদিন সীমান্তে পৌঁছেও তার আশঙ্কা, ‘নানা জায়গায় গোলমাল, অবরোধ, ভাঙচুর চলছে। যানবাহনও ঠিক মতো চলছে না। জানি না, ঠিক সময়ে পৌঁছে ভোট দিতে পারব কি না।’
বিএনপি জোট ভোট বর্জন করায় এ বার মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। ভোট হবে মাত্র ১৪৭টিতে। অনেকেই মনে করছেন, গোটা প্রক্রিয়া প্রহসন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে পেট্রাপোল বন্দর সূত্রের খবর, এক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশীদের ফেরার তাগিদ লক্ষ করা গিয়েছে। এ দিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অন্তত ৬০০ জন ওই সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করেছেন। তার মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশী, যারা ভোটের টানে দেশে ফিরেছেন। নোয়াখালীর জাহাঙ্গির আহমেদ বা ঢাকার নাজমুল হকের মতো বেশির ভাগেরই আশা, ভোট মিটে গেলে নিশ্চয়ই একটা সমাধান সূত্র বেরোবে।
কুমিল্লার বছর ষাটেকের অরবিন্দ সরকারের মতে, আগে কখনও পরিস্থিতির এত অবনতি আগে হয়নি। তিনি বলেন, ‘২০০৮-এর নির্বাচনের আগেও গোলমাল হয়েছিল। তবে এই পর্যায়ে নয়। ওই সময়ে তদারকি সরকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পেরেছিল।’ বেঙ্গালুরু থেকে চিকিৎসা করিয়ে ফেরা ময়মনসিংহের মহম্মদ শাহিন খান মনে করছেন, ‘সরকারের উচিত ছিল বিরোধীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ভোটে তাদেরও সামিল করা। তবে যতই অশান্তি হোক, সবারই ভোট দেয়া উচিত। না হলে সন্ত্রাসবাদীরাই শক্তিশালী হবে। দেশে অস্থিরতা কমবে না।’

ট্রাকে আগুন, বন্ধ সীমান্ত-বাণিজ্য
আনন্দবাজার পত্রিকা আরো জানায়, বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার ভারতীয় পণ্য বোঝাই ট্রাক পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বন্ধ রইল। এ দিন চাল বোঝাই ট্রাকটি ঘোজাডাঙা দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার ভোমরায় যায়। সেখানেই কিছু লোক ওই ট্রাকে আগুন দেয় বলে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে নামে ঘোজাডাঙার কিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। রোববারও বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে ঘোজাডাঙা এবং পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ রাখা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

শেয়ার করুন