দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘সমঝোতার সব সম্ভাবনা’ শেষ হয়ে গেছে, এমনটা গত সপ্তাহে ধরে নেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা। এরপর থেকে তিনি অপেক্ষা করছেন ৫ জানুয়ারি ভোট নেয়ার দিনটির। আগামীকালের এ দিনকে তিনি ‘অত্যন্ত গুরুত্বের’ সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন।
সারাদেশে ভোট নেয়ার চিত্র, ভোটারের উপস্থিতি, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, সহিংস ঘটনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর কাজটি করবেন মজিনা। তার এ প্রতিবেদনের ওপর ‘অনেকটা নির্ভর’ করছে এ নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়নের বিষয়টি। কূটনৈতিক একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানায় প্রিয় দেশ ডটনেটকে।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সূত্র জানায়, ‘৫ জানুয়ারি মজিনা নিজের কার্যালয়, বাসায় বসে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে নির্বাচনের খবর দেখবেন। দূতাবাসে কর্মরত বাংলাভাষী কর্মকর্তাদেরকেও এদিন পাশে রাখবেন তিনি। টিভিতে প্রচারিত সংবাদ, বক্তব্য তাদের কাছ থেকে ভালোমতো বোঝার জন্যই ওইদিন তাদেরকে পাশে রাখবেন মজিনা।’
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপির রাজনীতিবিদদের মধ্যে মজিনার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গেও থাকবে ৫ জানুয়ারি দিনভর যোগাযোগ। সময় হলে কোনো ভোট কেন্দ্রও পর্যবেক্ষণে বের হতে পারেন তিনি।’
সূত্রমতে, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তীব্র হতাশ ড্যান মজিনা। তবে নির্বাচন নিয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করবেন না তিনি। নির্বাচনের ফল, বা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য না করতে এর মধ্যে তাকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে।’
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে উপমুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমরা আগাম কিছু বলতে চাই না।’ তার এ বক্তব্যের পর মজিনার কাছে নির্বাচন নিয়ে আগাম মন্তব্য না করার বার্তাটি স্পষ্ট বলে উল্লেখ করে কূটনৈতিক সূত্র।
আরেকটি সূত্র জানায়, ‘ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার, বা যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের বাসায় ৫ জানুয়ারি বৈঠক করতে পারেন মজিনাসহ ঢাকায় নিযুক্ত আরো কয়েকটি দেশের কূটনীতিক। পরিস্থিতি কোন পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবেন তারা। বিরোধী দলবিহীন এ নির্বাচনের ফল কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তাও আলোচনা করবেন তারা। তবে এ নির্বাচনকে পাশ্চাত্যের দেশগুলো ভালো নির্বাচনের সনদ দেবে না।’
তথ্যমতে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা সরকার, বিরোধী দলের মধ্যে ‘সমঝোতার’ জন্য সবশেষ দূতিয়ালি করেন গত ৩১ ডিসেম্বর। ওইদিন রাজধানীর গুলশানের বাড়িতে ‘কার্যত অবরুদ্ধ’ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ‘৩১ ডিসেম্বরের বৈঠকে খালেদা জিয়ার কাছে মজিনা আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে ভারতের বার্তা পৌঁছে দেন। ভারতে ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি হয়ে যাক। ঢাকায় দ্রুত সরকার গঠন হোক। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন নির্বাচনের জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে আলোচনা শুরু করতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে পরামর্শ দিচ্ছে ভারতসহ বিদেশি কয়েকটি রাষ্ট্র। খালেদা জিয়ার কাছে এ বার্তাই পৌঁছে দেন মজিনা।’