দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় মানুষের পেট পিঠের সঙ্গে লেগে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এই অবস্থায় যত দেরিতে সমঝোতা হবে দেশের অর্থনীতি ততই অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। তবে সমঝোতার জন্য সবার আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা আর সমঝোতা কখনোই একসঙ্গে হতে পারে না।
শনিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সহিংস রাজনীতি, সংকটে দেশ-ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত।
সেমিনারে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ, সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন’র সম্পাদক নঈম নিজাম, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, ড. জিয়া রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা আলোচনায় বক্তব্য দেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “হাসিনা-খালেদার সংলাপ কখনোই ফলপ্রসূ হবে না। তাদের দু’জনের লক্ষ্য ভিন্ন। ১৯৭১ সালের মার্চেও ইয়াহিয়া-বঙ্গবন্ধু সংলাপ একই কারণে ফলপ্রসূ হয়নি। সেখানেও দু’জনের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন।”
তিনি বলেন, “জামায়াত বাংলাদেশের কোনো সংগঠন নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের বাংলাদেশ অংশ। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। ধর্মকে ব্যবহার করে যে রাজনীতি, তা নিষিদ্ধ করতে হবে। এসব জায়গায় ঐক্যমত্য না হলে সংলাপ সফল হবে না।”
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেন, “মৌলবাদীরা আজ গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়েছে। তারা এখন ‘অপারেশন ১৯৭১’ নাম দিয়ে একটি বাহিনীও করেছে। মুক্তিযুদ্ধে যা করতে পারেনি, তারা আজ তা করবে বলে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।”
তিনি বলেন, “আর্থ-সামাজিক বৈষম্য বাড়ার কারণে মৌলবাদ জেগে উঠেছে। এ কারণে আজ রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র, মূল সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার, মূল অর্থনীতির ভেতরে আরেকটি মৌলবাদী অর্থনীতি দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে। এসবের কারণ নির্মূল এবং করণীয় নির্ধারণ করতে চাই।”
বারাকাত বলেন, “এটি কি বাঁচার আন্দোলন নাকি গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন? দেশের প্রতিটি মানুষ ভীত, দিশেহারা। সবাই এর থেকে পরিত্রাণ চাইছে।”
ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ বলেন, “রোববারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৬০ ভাগ লোক ভোটকেন্দ্রে যাবে। ৫৩ থেকে ৬০টি আসনে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তাই এই নির্বাচন ’৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সঙ্গে তুলনীয় নয়। ওই নির্বাচনে ২৬ শতাংশ লোক ভোট দিয়েছিল।”
এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সহিংস আন্দোলন ও হরতাল-অবরোধে মানুষের পেট পিঠের সঙ্গে লেগে গেছে। আগে আমরা বলতাম দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ। দুই কোটি ক্ষুদ্র পুঁজির মানুষ কষ্টে আছে। দু’মাস আগেও আমরা ভালো ছিলাম। সম্ভাবনার দেশটিকে সহিংস রাজনীতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “২০১৩ সালে আমাদের পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যেখানে ভারত ৩০ শতাংশ ও ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে।”
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, “বিএনপি জামায়াত-শিবিরকে নামিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিল। তাদের সে কৌশল ব্যার্থ হয়েছে। চেয়েছিল সহিংসতা করে একটি অভ্যুত্থান করে ফেলবে। সেটি না পারলেও অন্তত সামরিক শাসন আসবে। কিন্তু, তাও হয়নি। তবে বর্তমান সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক ঐক্য দরকার। পুলিশ বা সামরিক বাহিনী দিয়ে সমাধান হবে না।”