জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আছে, নির্বাচনে নেই। এমন আলোচনা দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়ার পর থেকে। দলের সরকার সমর্থক বলে পরিচিত নেতারা প্রচার করে আসছিলেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন। এতে এরশাদেরও সমর্থন আছে। বৃহস্পতিবার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলের নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ করলেও ওই অনুষ্ঠানে যাননি রওশন এরশাদ। এমনকি জাতীয় প্রচার মাধ্যমে ছয়টি দলের প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেও জাতীয় পার্টির কেউ বক্তব্য রাখেননি। এতে নতুন প্রশ্ন দেখা দেয় রওশন এরশাদের অবস্থান নিয়ে। সূত্র বলছে এরশাদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে এখনও অনড়। রওশনও এর বাইরে নয়। এ কারণে তিনি নীরব রয়েছেন। ইশতেহার পাঠের ওই অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদ বা দলের মহাসচিব না থাকার পর এমনই আলোচনা সর্বত্র। সূত্র জানিয়েছে, সকালে ব্যারিস্টার মাহমুদ ইশতেহার ঘোষণার পর রাতে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে রওশন এরশাদ গণভবনে গিয়েছেন। সেখানে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। রওশন রাত ৮টার দিকে সেখানে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদের ঘণ্টাকাল বৈঠক হয়। বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে; নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও পরবর্তীতে করণীয় নিয়ে শেখ হাসিনা রওশন এরশাদের মধ্যে আলোচনা হয়। নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় গত ১২ই ডিসেম্বর এরশাদকে তার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবন থেকে আটক করে সিএমএইচ-এ নেয় র্যাব। গত ২৩ দিন ধরে তিনি সেখানে রয়েছেন। জানিয়েছেন সবদলের অংশগ্রহণ ছাড়া তিনি এই নির্বাচনে নেই। তার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের জানিয়েছেন। এদিকে দলীয় বিষয়ে নেতারা এখন দিকভ্রান্ত অবস্থায় আছেন। গতকাল এরশাদ সেনানিবাস মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। তাকে গাড়িতে করে নামাজ পড়ার জন্য আনা হয়। এ সময় ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় বসবাসরত জাপার নেতারাও নামাজ আদায় করতে সেখানে যান। তাদের সঙ্গে এশাদের দেখা হলেও কথা বলতে দেয়া হয়নি। নির্বাচন সামনে রেখে জাপার ২১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়ার পথে। ৬৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে আছেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, যারা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনেই জাতীয় পার্টি তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছে। এর মধ্যে যারা নির্বাচন করছে তাদের অনেকেই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করলেও অজ্ঞাত কারণে তা গৃহীত হয়নি, যা দেশবাসী অবগত। যারাই এই হাস্যকর নির্বাচন বর্জন করছে বাংলার ইতিহাসে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর যারা নির্বাচন করবে তারা বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে ইশতেহার ঘোষণা ও দলের পক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে রওশন এরশাদ ভাষণ না দেয়ায় জাতীয় পার্টির নির্বাচনে থাকার প্রচারে নতুন করে হিসাব শুরু হয়েছে দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে। নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যাবে। নির্বাচনের পর এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে।