দেশে নির্বাচনের নামে তামাশা চলছে। জনগণের সঙ্গে রসিকতা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে দেশের আশিভাগ মানুষেরই সমর্থন নেই। এছাড়া বিদেশেও এই নির্বাচন কোনোভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এই জবরদস্তির নির্বাচন দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেবে। এর দায়ভার সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
আগামী ৫ জানুয়ারি রোববার অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে এ পর্যবেক্ষণই দিয়েছেন বাম সংগঠনের নেতারা। শুক্রবার রাতে বাংলামেইলের সঙ্গে ফোনালাপে তারা এ কথা বলেন।
জোর করে নির্বাচন করা হলে দেশকে সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের দিকেই ঠেলে দেয়া হবে। তখন এর দায়ভার সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা। নির্বাচনকালীন ও পরবর্তী সহিংসতা এড়ানো ও সঙ্কট নিরসনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেন, ‘নির্বাচনের নামে রসিকতা ও তামাশা চলছে। এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। ফলে অনেক কিছুই হতে পারে। আর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে অবশ্যেই কিছু ঘটতে পারে। এ নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আপনি গণতন্ত্রের কণ্ঠকে রুদ্ধ করবেন আর সহিংসতা আশা করবেন না তা হতে পারে না।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আপনি যদি কোনো ঘরে একটি বিড়ালকে আবদ্ধ করে রাখতে চান তবে সে অবশ্যই আপনার ওপর হামলা করে সেই ঘর থেকে বের হতে চাইবে। গায়ের জোরে অনেক কিছুই করা যায় কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বেশিদিন থাকতে পারে না।’
দেশে সহিংসতা এড়াতে নির্বাচনকে স্থগিত বা বাতিল করার পরামর্শ দিয়ে আকবর খান বলেন, ‘নতুন করে স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সমঝোতার ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। নির্বাচন করে সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচন তো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলা হলে দেশে অরাজকতা বাড়বে। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং মানুষ মরবে।’
দেশের আশিভাগ মানুষ এ নির্বাচনের বিপক্ষে এবং এটা করা হচ্ছে একমাত্র গায়ের জোরে- এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘এ নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে এবং বিদেশের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ নির্বাচন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
নির্বাচনের নামে আজ দেশে তামাশা ও নাটক চলছে, দেশের মানুষ নির্বাচন বর্জন করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেশের সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, দেশ ধ্বংস হচ্ছে। সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা হয়েছে এটা কোনো সমাধান না। বরং সহিংসতাকে উসকে দেয়া হচ্ছে।’
এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডেকে এ নির্বাচন স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ৭ অথবা ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এই কমিটিতে যারা থাকবেন তারা দেশের বিভিন্ন স্থান ও বিভিন্ন পেশা থেকে আসবেন। এমন সব মানুষকে এখানে আনতে হবে যাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। এই তালিকায় থাকতে পারে ড. ইউনূস, অধ্যাপক আবু সাঈদ, বিচারপতি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।’
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এই নির্বাচন তার সমাধান দিতে পারছে না। বরং তাকে দীর্ঘায়িত করছে। ফলে সহিংসতা বাড়তে পারে এবং তা দীর্ঘায়িত হতে পারে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এখানে জঙ্গিবাদ বাড়বে। সরকার যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের উসকে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে গঠিত সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা থাকবে না ফলে তাদের সম্পূর্ণভাবে বলপ্রয়োগ করেই টিকে থাকতে হবে। তারা যে বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে তাতো ইতিহাস বলে না।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠন ফেমার সভাপতি মুনিরা খান বলেন, ‘দেশে যাতে কোন সহিংসতা না হয় তার জন্য নির্বাচন কমিশনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা যেহেতু আমাদের আশা দিয়েছেন তাই নির্বাচন কীভাবে তারা সুষ্ঠু করবেন তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাদের। সহিংসতা হলে এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যে অবস্থা চলছে এমন অবস্থায় আমরা কখনও নির্বাচন পর্যবেক্ষক করিনি।’ সহিংসতা রুখতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।