বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ইকোনমিস্টে প্রকাশিত ছবি ঢাকার গুলশানে কূটনৈতিক এলাকার ৭৯নং রোড। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের হাল দেখার জন্য এখন এটা একটা ভালো জায়গা। এখানে একটি বাসার দু’দিক আটকে রাখা হয়েছে ৫টি বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে। রয়েছে অসংখ্য পুলিশের অবস্থান। বাসার অপর দিকটি রাশিয়ান দূতাবাসের উঁচু দেয়াল। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া গৃহবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে আসা সমর্থকদের হয় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অথবা আটক রাখা হয়েছে বা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেক দফা শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন শুধুই নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। ৫ই জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু এর ফলাফল কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সবার জানা। খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং তাদের অপর ১৭টি জোটভুক্ত দল নির্বাচন বর্জন করছে। আর নির্বাচন বর্জনে সুর মেলানোর জন্য সরকার জাতীয় পার্টির প্রধান এবং সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হাসপাতালে আটক করে রেখেছে। এরপর সব থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো জামায়াতে ইসলামী যাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। ৯ কোটি ২০ লাখ যোগ্য ভোটারদের মধ্যে ৪ কোটি ৮৩ লাখ মানুষের ভোট দেয়ার প্রয়োজন হবে না। যারা ভোট দিতে পারছেন তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারবেন। খালেদা জিয়া ২৯শে ডিসেম্বর গণ-সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। ঢাকায় প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে আর এক হাজারেরও বেশি বিরোধীদলীয় সমর্থক-কর্মীকে আটকে করে পুলিশ তা বানচাল করে দেয়। কর্মসূচির দিন যেখানে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল, বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে সংবাদকর্মীরা শুধু সতীর্থ সংবাদকর্মীদের ক্যামেরাবন্দি করার সুযোগ পেয়েছেন। শহরের অন্যত্র বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের ভেতরে প্রতিবাদ করতে সমবেত হন যেখানে পুলিশ জলকামান আর সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা গেট ভেদ করে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে প্রবেশ করে বিরোধী সমর্থক আইনজীবীদের তাড়া করে এবং মারধর করে। নীরব দর্শকের মতো পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। লাঠিয়াল কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়ে বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সামনা-সামনি টক্কর দেয়ার জন্য। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে ওইদিনের সহিংসতায় মারা গেছেন ২ জন। ২৬শে ডিসেম্বর ৫০ হাজার অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার পর থেকে নতুন করে বড় ধরনের রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৬-এর ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। এরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা প্রণয়ন করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা দূর করে ২০১৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠান করাটা আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কার্যকর হলেও সামপ্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৫ জনের মধ্যে ৪ জন বাংলাদেশীর অবস্থান এর বিপক্ষে। এখন বিএনপির অবস্থা একেবারেই এলোমেলো। শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের পতন নিজেরাই ডেকে নিয়ে আনবে তার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করণীয় নেই তাদের। গত কয়েক মাসে বিএনপি তাদের অবরোধ কর্মসূচি জোরদার করে। সপ্তাহে মাত্র একদিন বাদ রেখে বাকি সবদিন অবরোধ পালন করেছে তারা। তাদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর সহিংসতায় নিহত হয় সাধারণ মানুষ। এদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত সম্পদের হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০০৮ সাল থেকে হাসিনার ভ্রাতুষ্পুত্রদের সম্পদ বেড়েছে ৩৩০ গুণ। কয়েকজন ধারণা করছেন একছত্র শাসক হিসেবে হাসিনা এক বছরের বেশি টিকতে পারবেন না। তারই একজন উপদেষ্টার মতে এটা স্বল্পব্যাপী হবে। একইসঙ্গে তিনি এ-ও যোগ করেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের অন্য কোন উপায় নেই। ঢাকায় এখন ইতিমধ্যে বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে, পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন কিভাবে হবে। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা স্বীকার করলেন, আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে যেখানে জয়ী হবে বিএনপি।