নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা দমনে কঠোর হবে সরকার

0
112
Print Friendly, PDF & Email

সরকার গঠন নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও নৈরাজ্য দমন নিয়েই বেশি ভাবছে আওয়ামী লীগসহ ক্ষমতাসীন সরকার।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ৫ জানুয়ারি । মাঝখানে আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা। এরই মধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে আজ শুক্রবার সকাল আটটা থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আচরণবিধি মেনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এখন নির্ভার সময় অতিক্রম করছেন। কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন বিএনএফের চৌধুরী লিটন।

এ ব্যাপারে মাহবুব উল আলম হানিফের ব্যক্তিগত সহকারী টুটুল রাইজিংবিডিকে জানান, সকাল আটটার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। দুপুরে স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়েছেন তিনি। এখন তিনি ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন।

তবে বিগত ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার এবার হাত দিয়ে না খেয়ে চামচ দিয়ে খেয়ে শেষ করছে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। তাই এবার দশম সংসদ নির্বাচনে নৌকা-লাঙলের অলিখিত জোট হয়েছে, সরকার গঠনে দোষ নেই। দলীয় নেতাদের বক্তব্যে এমন অবস্থা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে।

গত নবম সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এবারও মহাজোটে নির্বাচন করছেন। তবে কাগজে-কলমের আনুষ্ঠানিকতায় নয়, অনানুষ্ঠানিকতায়। কারণ গত ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার বিভক্ত হয়ে অনেক নাটকীয় অঙ্কের মহড়া শেষ করে প্রধান বিরোধী জোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটকে বাইরে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচন করছে। ক্ষমতাসীন সরকার গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অব্যাহত রাখতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিয়েছে অনড় অবস্থান।

তাই নৌকার মতো লাঙলও এবার শেখ হাসিনার মার্কা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচনকালীন সরকারের শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু হোসেন বাবলার সমর্থনে ঢাকা-৪ আসনের শ্যামপুরে এক নির্বাচনী জনসভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সমঝোতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। এজন্য ঢাকা-৪ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এ আসনে আবু হোসেন বাবলাই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। নৌকার মতো লাঙলও এখন শেখ হাসিনার মার্কা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনী সফরে বের হয়েছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এখনো এলাকায় অবস্থান করছেন তারা। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের এলাকায় অবস্থান করার দলীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কারণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সরকার গঠন করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই এ নিয়ে চিন্তা না করে, নির্বাচন-পরবর্তী বিরোধী জোটের সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ডে প্রতিরোধ-মোকাবিলা নিয়েই ভাবছে সরকার।
সেজন্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরেও আগামী মার্চ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকার কৌশল নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি।

এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বঙ্গবন্ধু একাডেমির আলোচনা সভায় বলেন, নির্বাচনের দুই সপ্তাহের মধ্যে সারা দেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দমন করাই নতুন সরকারের মূল লক্ষ। ৫ জানুয়ারির পর যে সরকার গঠন করা হবে তার প্রধান টার্গেট হবে দুই সপ্তাহের মধ্যে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিরোধী জোটের ২৯ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের অভিযাত্রার অপমৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপাসরসন খালেদা জিয়ার আন্দোলন ও ষড়যন্ত্রের অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা এখন সরকার গঠন নয়, পরবর্তী করণীয় নিয়েই ভাবছি।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মুঠোফোনে রাইজিংবিডি থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শেয়ার করুন