কেউ জানে না কখন কিভাবে অচলাবস্থার নিরসন হবে

0
83
Print Friendly, PDF & Email

বাংলাদেশের আরও সর্বনাশ হবে সম্ভবত, আরও অনেক প্রাণহানি ঘটবে। তারপর হয়তো কোনো ধরনের সমঝোতা হবে। তবে কেউ জানে না, কখন না কিভাবে দেশটিতে বিরাজমান অচলাবস্থার নিরসন হবে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক জিয়া হাসানের মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লোকচুক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সেটা হলো সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে পরিবর্তন করছে যার ফলে রাজনৈতিক দল, সরকার, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যকার সীমারেখা ক্রমাগত অস্পষ্ট হয়ে পড়ছে, সব প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করছে। এখন আর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধতা নেই। এতে আরো বলা হয়, ভারত আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রবলভাবে সমর্থন করছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মানসম্পন্ন নাটকের প্রকট অভাবের মধ্যেই বাংলাদেশে রাজনীতির প্রতিদিনকার ঘটনাই অত্যন্ত উচ্চমানের বিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে। এতে অবশ্য প্রচুর প্রাণহানিও হয়ে থাকে। তবে আওয়ামী লীগের ক্ষীয়মান জনপ্রিয়তার এই সময়ে রাজনৈতিক নাটক ধ্বংস ও সহিংসতার এমন এক অসহ্য স্তরে পৌঁছে গেছে, তা বাংলাদেশের প্রতিটি লোকের জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ৪০ বছরে একবারো কোনো দলকেই টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত করেনি। দুর্নীতি দমনের বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় কার্যকর পরিবর্তনের জন্য জনগণের কাছে শেষ ও একমাত্র যে অস্ত্রটি রয়ে গেছে তা হলো ব্যালট। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমনকি ব্যালটের এই ধারাটিও পাল্টাতে চায়। তারা নির্বাচন তদারকির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বদলে ‘সর্বদলীয়’ সরকার তৈরি করেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অবশ্য তা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। গত দুই বছরে তারা গুরুত্বপূর্ণ কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। এমনকি যেখানে বিরোধী দল স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করেছে, সেখানেও তার দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা পর্যন্ত নিজ দলের বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সম্ভবত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নন। ভারত তাকে প্রবলভাবে সমর্থন দিচ্ছে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা পরিবর্তন করার শক্তি বিএনপির নেই। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে বিরোধী দলের প্রায় প্রত্যেক সিনিয়র নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। আর আসন্ন সরকারে কিছুসংখ্যক আসন দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদকে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা প্রদানের ছক এঁকে ফেলেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লোকচুক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তা হলোÑ সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে পরিবর্তন করছে যার ফলে রাজনৈতিক দল, সরকার, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যকার সীমারেখা ক্রমাগত অস্পষ্ট হয়ে পড়ছে, সব প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করছে। এখন আর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধতা নেই দেশটিতে। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের সর্বনাশ আরও হবে, অনেক বেশি লোক তাদের জীবন কোরবানি করবে। তারপর হয়তো কোনো ধরনের সমঝোতা হবে। তবে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, কেউ জানে না কখন ও কিভাবে বিরাজমান অচলাবস্থার নিরসন হবে।

শেয়ার করুন