৪১১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ

0
160
Print Friendly, PDF & Email

চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ডেসটিনি গ্রুপ এবং এ কাজে সহযোগী ৪৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় তদন্ত শেষ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সাবেক সেনাপ্রধান ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ ও ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনি গ্রুপের শীর্ষ ২২ পরিচালক।
দুদকের পরবর্তী নিয়মিত কমিশন বৈঠকে এই তদন্ত প্রতিবেদন দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে বলে প্রথম আলোকে জানান দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. শাহাবউদ্দিন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আগামী সোমবার কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন খতিয়ে দেখে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেবে।
মো. শাহাবউদ্দিন আরও জানান, মামলার এজাহারের বাইরেও অনেক অভিযুক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। রাজধানীর কলাবাগান থানায় ২০১২ সালের ৩১ জুলাই এই মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছিল।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রমাণ মিলেছে, উচ্চ হারে মুনাফার লোভ দেখিয়ে এমএলএম (বহুস্তরের বিপণন) ব্যবসা পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো- অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন গ্রুপের পরিচালকেরা। ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেছেন ডেসটিনির পরিচালকেরা।
বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা (১) সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (ডিএমসিএসএল) মামলায় আসামিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সাড়ে আট লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ সময় ঋণ প্রদান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক হাজার ৯০১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। সে অর্থ থেকেই আসামিরা লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সরিয়ে নেন।
অর্থ আত্মসাতের এই মামলায় আসামিরা হচ্ছেন হারুন-অর-রশিদ, রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ফারাহ দীবা, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, জমশেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন, শিরিন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান, আবুল কালাম আজাদ এবং ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম।
তদন্তে এই মামলায় নতুন করে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান, এস এম আহসানুল কবির, এ এইচ এম আতাউর রহমান, গোলাম কিবরিয়া, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, দেলোয়ার হোসেন, বেস্ট এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এম হায়দার উজ জামান, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন, সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কাজী ফজলুল করিম এবং সাবেক কর্মকর্তা মোল্লা আল আমীন। আত্মসাতের ঘটনায় সহযোগী হিসেবে আরও অভিযুক্ত হচ্ছেন, বনানীর ইসলাম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের শফিউল ইসলাম, বাগেরহাটের জিয়াউল হক মোল্লা, জেসমিন আক্তার, ফিরোজ আলম, শাহাজাদপুরের সেতু এন্টারপ্রাইজের সিকদার কবিরুল ইসলাম, বনানীর মমতাজ এন্টারপ্রাইজের ওমর ফারুক, ডিভেক রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, ডেসটিনি গ্রুপের কন্ট্রোলার সুনীল বরণ কর্মকার, ডেসটিনি-নিহাজ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস সহিদুজ্জামান, ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, ডেসটিনি এয়ার সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আকতার ও ডেসটিনি গ্রুপের অ্যাডভাইজার শফিকুল হক।
দুদক সূত্র জানায়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের মূলধন ৫০ কোটি টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি এবং ২০টি শাখা খোলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারের ১০ সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, বর্তমানে জামালপুরে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল জব্বার, সিরাজগঞ্জের জেলা সমবায় কর্মকর্তা কাজী মেজবাহ উদ্দিন, দোহারে কর্মরত এইচ এম সহিদ উজ জামান, ঢাকার জেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ গালীব খান, সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক ইকবাল হোসেন ও সাইদুজ্জামান, যুগ্ম নিবন্ধক মাহবুবুর রহমান, উপনিবন্ধক ফজলুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রতুল কুমার সাহা এবং কাজী নজরুল ইসলাম।
দুদকের অপর মামলাটি ছিল ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) সংক্রান্ত। বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা জানায়, ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) জন্য দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ অর্থ থেকে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ অর্থ বেতন-ভাতা, সম্মানী, লভ্যাংশ, বিশেষ ভাতা বা কমিশনের আকারে আত্মসাৎ বা নিজ ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল।
এতেও আসামি হিসেবে আছেন হারুন-অর রশিদ ও রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের মামলায় অভিযুক্ত প্রথম ১২ জন। এ ছাড়া নতুন করে অভিযুক্ত হয়েছেন, ডেসটিনি ২০০০-এর বিক্রয় প্রতিনিধি জসিমউদ্দিন ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, এস এম আহসানুল কবির, জুবায়ের সোহেল, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান ও আবুল কালাম আজাদ।

শেয়ার করুন