নানাভাবে যোগাযোগ করার পরও উন্নত বিশ্বের পর্যবেক্ষকদের না পাওয়ার পর সার্কের প্রতিনিধিদের আনছে সরকার। আগামীকাল সকালে তারা ঢাকা এসে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অর্থও খরচ করা হচ্ছে বিদেশি পর্যবেক্ষণের বিষয়ে। কোটি টাকা খরচে সার্কের ১৪ সদস্যের এক দল প্রতিনিধিকে দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করানো হবে। নির্বাচনের সময় দেশে আনার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি কাজ করে চলেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে খোলা হচ্ছে বুথ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণার পর পরই সার্ক সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সার্কভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচন কমিশনের সংগঠন ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজ অব সাউথ এশিয়ার (ফেমবোজা) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তারা নিজ খরচে আসায় আগ্রহী না হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফেমবোজার পর্যবেক্ষকদের থাকা-খাওয়া বা অন্য কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করা হয়। সূত্র জানায়, এর পাশাপাশি বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা সফরে আগ্রহী করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়। যে কোনো বিদেশি নির্বাচন উপলক্ষে ভিসার জন্য আবেদন করা মাত্র তার ব্যবস্থা করার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তেও এ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যবেক্ষকরা না আসার ঘোষণার পর পরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য কৌশল নির্ধারণের কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত মিশনগুলো কাজ করছে। কমিটি ইতোমধ্যেই দুই দফায় বৈঠকও করেছে। জানা যায়, নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের না আসার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে সরকারের বিভিন্ন মহল বিদেশিদের পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার প্রক্রিয়াকে ‘ব্যাড প্র্যাকটিস’ বলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সীমিত সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক আসেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে আসেন অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষক। ধারাবাহিকভাবে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮-এর সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক পরিমাণ বিদেশি পর্যবেক্ষক অংশ নেন। গত বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৫ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ১৫০ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল ইইউ। এ ছাড়া ৮১ জন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইআরআই, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর সংস্থা এনডিআইর ৮০ জন পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশন থেকে আমন্ত্রণ জানানোর পরও ইইউ, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জানিয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার বিষয়ে। পর্যবেক্ষণে না আসার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পর্যবেক্ষক না পাঠিয়ে তারা সরকারকে এক ধরনের সংকেত দিচ্ছে। সেটা হলো, এ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তাদের সঙ্গে ওইসব দেশের সম্পর্ক কেমন হবে। অধ্যাপক ইমতিয়াজ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপসহ ওইসব দেশ সহযোগিতার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারে। তারা যে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মনে করবে না, বৈধতা দেবে না, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক নাও রাখতে পারে। এ সহযোগিতা সম্পর্কের নানা দিক আছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অন্যতম। তিনি মনে করেন নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ আরও নানা দিকে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।