দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, ‘নির্বাচন পরবর্তী’ রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আনতে বর্তমানে দৌড়ঝাঁপ করছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যেও বিদেশি কূটনীতিকদের দৃশ্যমান দৌড়ঝাঁপের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক সূত্র এ ধরনের তথ্য নিশ্চিত করছে। কূটনীতিকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন বন্ধ কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আনার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা যাতে না হয় বা কি ধরনের ছাড়ের মাধ্যমে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সমঝোতায় নিয়ে আসা যায় সে লক্ষ্যেই বিদেশিরা দূতিয়ালি অব্যাহত রেখেছেন।
সূত্র জানায়, গেল বছরের শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পরবর্তীতে নির্বাচনী সরকার নিয়ে প্রধান দুই জোটের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। বিরোধী পক্ষ আন্দোলনে রাজপথে নামে আর সরকার পক্ষ আন্দোলন দমনে সচেষ্ট হয়। পরিস্থিতি জটিল পর্যায়ে পৌঁছলে জাতিসংঘ মহাসচিব দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ে ফোন করেন উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে। পরবর্তীতে মহাসচিব বান কি মুন তার বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে ঢাকা পাঠালে তিনি প্রধান দুদলকে বৈঠকে বসান।
এর মধ্যে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। কিন্তু ২০ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও রাশিয়া পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এরপর নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়।
জানা গেছে, গেল ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকরা কিছুদিনের জন্য দৌড়ঝাঁপ বন্ধ রাখে। কিন্তু গত সোমবার ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনবিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন। পরদিন তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গেও বৈঠক করেন। একই সঙ্গে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। একই দিন বিকেলে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার ইইউ জোটের একটি দূতাবাসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বিরোধী দলকেও কূটনীতিকরা একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা আকারে ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইছেন যাতে করে ‘নির্বাচন বন্ধ করার চেয়ে পরবর্তীতে সমঝোতা হলে বিএনপি দীর্ঘমেয়াদি লাভবান হবে।’
ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে যে বার্তা রয়েছে তাতে মনে হয় নির্বাচনপরবর্তী সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি করতে দৌড়ঝাঁপ বা দূতিয়ালি করছেন বিদেশি কূটনীতিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে যখন কূটনীতিকদের সরাকরি পর্যায়ে কথা হয়েছে তখনই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তখন তারা বলেছিলেন, ‘নির্বাচন হোক তারপর দেখা যাবে।’ কিন্তু তারা একবারও বলেননি এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দেবেন না। ফলে আশা করা হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের যেসব আসনে এখন নির্বাচন হচ্ছে সেগুলোতে যদি উল্লেখযোগ্য ভোটার উপস্থিতি থাকে বা নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে অবশ্যই কূটনীতিকদের পেছনে যাওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ থাকবে না।