ফের ভাঙনের কবলে জাতীয় পার্টি!

0
159
Print Friendly, PDF & Email

ফের বিভক্তির সূর সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে দলটির তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে।

বৃহস্পতিবার দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ইশতেহার ঘোষণার পর থেকে শুরু হয় এ গুঞ্জন।

এ ব্যপারে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, “আমাদের দলের শীর্ষ নেতারা এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একপক্ষ মনে করছে নির্বাচনে যাওয়া সঠিক। আরেক পক্ষ মনে করছে না যাওয়া সঠিক। একটা গণতান্ত্রিক দলে দ্বিমত থাকতেই পারে।”

তিনি আরও বলেন, “ তবে কোন মত সঠিক এটা পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের মাঝে ফিরে আসা ছাড়া আমরা বলা কঠিন। বর্তমানে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মনোনীত মুখপাত্র হিসাবে রয়েছেন জিএম কাদের।”

আহসান হাবীব লিংকন আরো বলেন, জিএম কাদের দলের নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন- এ প্রহসনের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন এরশাদ। আমি নিজেও এর পক্ষে রয়েছি।”

দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও ইশতেহার প্রনণয়ন কমিটির প্রধানরা যেখানে উপস্থিত নেই। সেখানে এই ইশতেহার ভিত্তহীন।

পার্টির চেয়ারম্যানের অবর্তমানে দলের যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে শুধু জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ, জিএম কাদের ও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের। ইশতেহার প্রকাশ অুনষ্ঠানে তাদের তিনজনের একজনও না থাকায় এ ইশতেহার প্রকাশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও অভিমত তাদের।

যদিও শুরু থেকেই নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন রওশন এরশাদ। তবে সিএমএইচে এরশাদের সঙ্গে রওশনের সাক্ষাতের পর থেকে তার নীরবতা অন্য দিকে মোড় নিয়েছে বলেও মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

ইশতেহার ঘোষণার আগেই জাপার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাই ইশতেহারের প্রশ্নই আসেনা। তাছাড়া নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসাবে আমি নিজেও এ বিষয়ে অবিহিত নই।”

একই কথা বলছিলেন ওই কমিটির সদস্য সচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতী। তিনি বলেছেন, ইশতেহারের সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

ইশতেহার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় দলের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হবেন না বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারি আবু তইয়ুব। এ বিষয়ে আবু তইয়ুব বলেন, “স্যার নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।”

দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান শীর্ষ নিউজকে বলেন, “পার্টির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুধু মহাসচিব ও জিএম কাদেরকে। ইশতেহার প্রকাশ কেন দলের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের অধিকার রাখেন না আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।”

এদিকে গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্য থেকে ভিডিও বার্তায় এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা ও মুখপাত্র ববি হাজ্জাজ বলেছেন, নির্বাচনে না যওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন এরশাদ। এ বিষয়ে এরশাদ ও মহাসচিবের সাথে নিরিবিচ্ছিন্ন যোগযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন ববি হাজ্জাজ।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ওই ইশতেহারে ৮টি দফা রয়েছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মাঈদুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম, নাসীম ওসমান, যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসে খোকা ও সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর বাহিরে প্রায় সিংহভাগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন না আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে। যদিও আনিসুল ইসলাম দাবি করেছেন, এই ইশতেহারের প্রতিটি অক্ষর এরশাদের পক্ষ থেকে দেওয়া।

শেয়ার করুন