আগামী ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তামশার এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন।
তবে একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, অসাংবিধানিক পন্থায় যাতে কেউ ক্ষমতার দখল নিতে না পারে সেজন্যই ওইদিনের এই নির্বাচন করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন সুজন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা ব্যতিত ভিন্ন কোনো আয়ের উৎস থাকার কথা নয়। সরকারের সঙ্গে কারো ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’
কিন্তু ইসির হলফনামায় অনেকেই ব্যক্তিগত ব্যবসা কিংবা সরকারি কাজের মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধির হিসাব দেখিয়েছেন। এমন হিসাব দেওয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সুজন সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রহের মামলা হওয়া উচিত বলে মনে করে।
দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের নানা তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫৩ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোনো নির্বাচনই হবে না। ৪১টি দলের মধ্যে মাত্র ১২ দল অংশ নিচ্ছে, তাও জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে দোলাচল রয়েছে। এটা একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’
সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক নির্বাচনকে তামাশা আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘তামাশার জন্য যেমন অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকেন। তেমনি আমাদের অনেক সংসদ সদস্য আইন ভঙ্গ করে এই নির্বাচনে অভিনেতা-অভিনেত্রীর ভূমিকা পালন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১৪৭ (৪) ধারায় বর্ণিত সরকারের মন্ত্রীসহ ৮টি পদে যারা আসীন আছেন, তাদের বেতন ছাড়া অন্যান্য আয় অর্জন নিষেধ এবং কোনো লাভজনক পদে আসীন হতে পারবেন না। অথচ আমরা দেখছি যে, গত পাঁচ বছরে আমাদের অনেক সংসদ সদস্য ব্যবসায়িক উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থেকে তাদের সম্পদ অনেক গুণ বাড়িয়েছেন, যা সংবিধান সম্মত নয়।’
শাহদীন মালিক বলেন, ‘এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২-কে (শ)’ ধারা অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে লিপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার এবং সংসদ সদস্য থাকার অযোগ্য হলেও, এ ধরনের অনেক প্রার্থীই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।’
বিষয়টি যাচাই পূর্বক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও এ নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক নয়, তারপরেও সুজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তথ্যের যে কাজটি করেছে, তা একটি রুটিন কাজ আখ্যায়িত করে বিচারপতি এবাদুল হক বলেন, ‘আমরা হলফনামায় প্রার্থী প্রদত্ত তথ্যের একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেছি, যার উদ্দেশ্যই হলো- ভোটারদের ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা জেনে-শুনে-বুঝে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘কারো কারো কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তবুও এটার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর সেজন্যই নির্বাচটি হচ্ছে।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সুজনের চেষ্টায় আদালত প্রার্থীদের তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করেছে। অথচ ক্ষমতাসীন দল সিটি রহিতকরণের প্রচেষ্টায় লিপ্ত, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এ সময় তিনি হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের বর্তমান মূল্য উল্লেখ করারও দাবি জানান।
গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দশম নির্বাচনে প্রাথীদের অনেকেরই অস্বাভাবিক সম্পদ বাড়লেও দুদক বলছে সম্পদের তথ্য নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের এ ধরনের বক্তব্য কাম্য নয়। কারণ সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা হলে দুর্নীতি কমবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘দুর্নীতি হ্রাসে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরও সম্পদ এবং আয়করের তথ্য খতিয়ে দেখা উচিৎ। একই সঙ্গে তারা যে গাড়ি ক্রয় করেন, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার।’
ইঞ্জিনিয়ার মুসবাহ আলীম বলেন, ‘দেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক সংকটের স্থায়ী সমাধান আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এজন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী সমাধান।’
এ লক্ষ্যে সবাইকে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।