আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ জয় পেলেও তা হবে ‘সম্পূর্ণ অবৈধ’। ভারতের বহুল প্রচারিত হিন্দুস্তান টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনে আগে রাজপথে সহিংসতা সাধারণচিত্র হলেও প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের ঘটনা বিরল। এ অবস্থায় আগামী ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ জয় পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু তা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ।’
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বন্ধের জন্য শক্তি প্রয়োগ করেছে কিন্তু ব্যাপকমাত্রায় সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, নির্বাচন পরিচালানার জন্য যৌক্তিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে, এমনকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা স্থগিত করার কিছুটা কম যৌক্তিক দাবির পক্ষেও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ে সক্ষম হয়েছেন।
তবে দিল্লি এক্ষেত্রে কানে তালা লাগিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সম্পর্কের কারণে বিশ্ব চেয়েছিল ঢাকার ব্যাপারে নয়াদিল্লি অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। তবে ভারতের অবস্থান হলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করা।
তবে এই ধারণা স্পষ্ট যে, আরেকবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলে নয়াদিল্লি অখুশী নয়। এটা শুধু এই কারণে নয় যে শেখ হাসিনা ভারতের প্রতি অধিক বন্ধুসুলভ।
বরং এটা এ কারণেও যে, নয়াদিল্লি চায় ঢাকায় এমন সরকার ক্ষমতায় থাকুক যারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ইসলামী সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসীমান্ত সংযোগ ইস্যুতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
শেষের আকাঙ্খাগুলো যদিও বোধগম্য তথাপি ভারতের বোঝা উচিৎ যে বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল তার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ রক্ষা হতে পারে।
‘এ স্টাবল ডেমোক্রেটিক পলিটি ইন বাংলাদেশ ইজ ইন ইন্ডিয়া’স ইন্টারেস্ট (ভারতের স্বার্থেই দরকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থিতিশীলতা)’ শিরোনামে সোমবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, যে ঢাকা প্রতিটি নির্বাচনে ভারতপন্থি থেকে ভারতবিরোধী অবস্থান নেয় তা ভারতের প্রতিবেশী নীতির আহাম্মকি বৈ কিছু নয়।
দেশটির মেরুকরণকৃত রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতি টানার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রমাণ আছে যে, বিএনপি ব্যবসায়ী সমর্থকরাও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য থেকে উপকৃত হওয়ায় তাদের ভারত বিরোধিতা কমে আসতে শুরু করেছিল। নির্বাচন বর্জনের ফলে বাংলাদেশ এতদিনে যে রাজনৈতিক পরিপক্কতা অর্জন করেছিল তা জলে গিয়েছে। এতে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত কোনো লাভ হয়নি।