আগামী রবিবার ভোট। সব প্রস্তুতি শেষ কমিশনের। শনিবার থেকেই নিরাপত্তায় ঢেকে যাচ্ছে ভোটকেন্দ্রগুলো। প্রধান বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট প্রতিহতে লাগাতার অবরোধ করছে।
স্বতন্ত্র ছাড়া অন্য প্রার্থীদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক দলগুলোর। ৪২টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে অংশ নিচ্ছে মাত্র ৮টি। ৫ জেলায় ভোটেরই প্রয়োজন নেই।
১৫৩টি আসনে ভোটবিহীন জয় পেয়েছে প্রার্থীরা। প্রতিরোধ শঙ্কার মধ্যে ভোটাররা। তারাই ৫৯ জেলার ১৪৭টি আসনে নিজেদের অধিকার প্রয়োগের চেষ্টা করবেন। এ সংখ্যা দেশের মোট ভোটারের অর্ধেকেরও কম। ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ জন। তারাই ৩৯০ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে বেছে নিবেন নিজেদের প্রতিনিধি।
একতরফা নির্বাচন হওয়ায় এবার বেশিরভাগ ভোটার তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। এদের মধ্যে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলেরই অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেরাই এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে তারা যে আসনের ভোটার, সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের ভোটার। এটি ইটনা, মিঠামইন ও আস্তাগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। তিনি মিঠামইনের কমলাপুর গ্রামের ভোটার। রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী ইতোমধ্যে এখান থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-১০ আসনের ভোটার। এই আসনের সীমানা ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ৫ নং ধানমন্ডির সূধা সদনও রয়েছে।
এই আসন থেকে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ভোটের দিন শেখ হাসিনা এই আসনে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে ভোট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলেন। এই ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন তার ভাতিজা ফজলে নূর তাপস।
শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নন, আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা একই কারণে এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংসদ উপনেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতা এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। তাদের আসনে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। জয় ঢাকা সিটির একজন ভোটার বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তিনি ভোট দিতে এসেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।