দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক সুযোগ রয়েছে। তাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে বিএনপিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে মত দিয়েছেন দেশের প্রবীণ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেছেন, এখনো সুযোগ আছে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করার। নইলে ঘোর বিপদ ঘটবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে রফিক উল হক এসব কথা বলেন।
আগামী ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, “আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বিধান রয়েছে। তাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে বিএনপিকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। এখনো সুযোগ আছে, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে নির্বাচন করা। সে নির্বাচনে বিএনপির উচিত অংশ নেয়া। আর সরকারের উচিত সমঝোতার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে ছাড় দেয়া। এসব ছাড়া যদি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার পরের দিন থেকে দেশ ভয়াবহ অবস্থায় চলে যাবে। সহিংসতা আরো বাড়বে। মানুষ মারা পড়বে অসংখ্য। পরিস্থিতি মোকাবিলা করা খুব কঠিন হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নিজেই এর জন্য ভুক্তভোগী হবে। কোনো সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না বলে আমি বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ নিজেও জানে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তবু ভাবছে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে কয়েক দিন দেশ চালাতে পারবে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক উল হক বলেন, “১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী। কারণ সংবিধানে স্পষ্টভাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার বিধান রয়েছে। তাই এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকার নির্বাচনে প্রায় চার শ কোটি টাকা খরচের নামে নষ্ট করছে। এটা জনগণের টাকা। কোনোভাবেই এই টাকা ৫ জানুয়ারিতে অনর্থক খরচ করার মানে হয় না।”
মানবাধিকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিরোধী দল তো সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। এতে শত শত মানুষ মরছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার মতো অবস্থা। মানুষ কর্ম হারাচ্ছে। আর এর সবচেয়ে বড় ভিকটিম হচ্ছে সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ। মারাও যাচ্ছে তারাই বেশি। সরকারও এর জন্য দায়ী। বিরোধী দলের নেতার বাড়ির সামনে রাস্তায় বালুর গাড়ি রেখে তার পথ রুদ্ধ করার ঘটনা বিশ্বের আর কোনো দেশে ঘটেনি। তাই এ রকম ঘটনা গিনেজ বুকে ওঠার মতো। এটা দেশ ও জাতির জন্য খুব লজ্জাকর ব্যাপার যে, কোনো বিরোধী দল স্বাধীনভাবে তার কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। এটা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। বিরোধী দলেরও উচিত সভ্য আচরণ করা। কিন্তু কারো দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। এর ভবিষ্যৎ খুব ভালো না।”
সুপ্রিম কোর্টে বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের কর্মসূচিতে সরকারদলীয় কর্মীদের যে হামলা এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে রাজনৈতিক কর্মীরা যে হামলা করেছে, তা খুব দুঃখজনক। এতে বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ারই কথা। এই সংস্কৃতিটাই বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করছে।”
নতুন বছর প্রসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে রফিক উল হক বলেন, “২০১৩ সালের সার্বিক বিষয় দেখে মনে হয়, বছরটা একেবারেই খারাপ কেটেছে বাংলাদেশে। আশা করেছিলাম, ২০১৪ সাল ভালোভাবে কাটানো যাবে। কিন্তু মনে হচ্ছে, আশায় গুড়েবালি। ভালোভাবে কাটানোর কোনো লক্ষণ দেখছি না।”