গলফ খেলে, টিভি দেখে সময় কাটছে এরশাদের। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে যিনি ঝড় তুলেছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। একেবারে শেষ দিন সব প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার। তারপর থেকেই শুরু নাটকীয়তা। সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নেয়া আবার সরকারে দলের নেতাদের এখনও থাকা নিয়ে রহস্য কাটেনি। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় গ্রেপ্তার হতে পারেন- এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন মিডিয়াকে। বলেছিলেন তাকে গ্রেপ্তার করতে এলে আত্মহত্যা করবেন। এরশাদ গ্রেপ্তার না অসুস্থ এ নিয়ে এখনও ধূম্রজাল। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সিএমএইচের ভিভিআইপি ওয়ার্ডে আছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তিন তলায় অবস্থিত এই ভিভিআইপি ওয়ার্ডের নাম মেঘনা। ২০ দিনের বেশি এ ওয়ার্ডেই আছেন এরশাদ। খুব ভোরে উঠে হাঁটাহাটি করেন সিএমএইচের মধ্যেই। কখনও-সখনও যান গলফ খেলতে। পুরোদিনের বন্দিদশা গোছাতে প্রায়ই রাতে কড়া নিরাপত্তায় হাঁটতে বের হন সিএমএইচের নিয়ন্ত্রিত এলাকাতে। সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কি কি করা যাবে আর কি কি করা যাবে না তা রুটিন ঠিক করা হয় আগের দিন বিকালেই। সিএমএইচে এরশাদের দেখভালে যুক্তদের করা এ রোডম্যাপের নাম দেয়া হয়েছে পার্ট ওয়ান। এর আওতায় চলে এরশাদের চলাফেরা। সেই অনুযায়ী তার নিরাপত্তাকর্মীদেরও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। এ তালিকায় রয়েছে মেসওয়েটার, এনসি(ই), ওয়ার্ডবয়, মেডিকেল এসিসট্যান্ট, কুক ওয়ার্ডবয়, সুইপার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। একজন জেসিও ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে সার্বিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ রুম ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। অধিনায়ক সার্জিক্যাল উইংয়ের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ডিউটি আওয়ার শেষে দায়িত্বরতরা চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যাদি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেন। একজন সৈনিকের মতোই সকালে সিএমএইচে হালকা হাঁটাহাঁটি। সাধারণত এ সময় সিএমএইচ এলাকায় কারও প্রবেশাধিকার থাকে না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিএমএইচে চিকিৎসাধীন কেউ কেউ এরশাদকে হাঁটতে দেখেছেন। এ সময় সঙ্গে থাকেন এরশাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মকর্তা ও ডিউটিরত চিকিৎসক। ফিরেই হাতে পত্রিকা নিয়ে চোখ বুলান। ভিভিআইপি এ ওয়ার্ডে প্রতিদিনই পৌঁছে দেয়া হয় ইত্তেফাক, প্রথম আলো ও জনকণ্ঠ। পত্রিকা হাতে নিয়েই নাশতা সারেন। নিকটাত্মীয় ছাড়া কারও দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। তাই টেলিভিশন আর তিনটি পত্রিকা পড়া ছাড়া তেমন কিছুই করেন না। ব্যক্তিগত মুঠোফোন ব্যবহারের সুযোগ নেই। কখনও কোন জরুরি প্রয়োজনে অন্য কারও ফোন ব্যবহার করে থাকেন। সার্বক্ষণিক একটি রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই থাকেন। রুটিনমাফিক পালাক্রমে প্রতিদিন তিনজন ডাক্তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। চলে প্রয়োজনীয় চেকআপও। তিন বেলায়ই স্বাভাবিক খাবার খেয়ে থাকেন। তবে একেক দিন একেক ধরনের মেন্যু থাকে। আর এ বিবরণী পার্ট ওয়ানেই উল্লেখ থাকে। বেশির ভাগ দিনই সকালের খাবারে দেয়া হয় হরলিক্স ও বিস্কুট। বিরতি দিয়ে দুপুরের আগে দেয়া হয় হালকা নাশতা। দুপুরের মেন্যুতে মাছ, মাংস ছাড়াও থাকে স্যুপ। রাতের মেন্যুতে থাকে হালকা খাবার। খুব সকালেই রুমে পৌঁছে দেয়া হয় পত্রিকা। অফুরন্ত অবসরে এরশাদের আশ্রয় টেলিভিশনে। রিমোট নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন দেশ-বিদেশের নানা চ্যানেল। দেশের চলমান পরিস্থিতি অবগত হন টিভি দেখেই। ১২ই ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের দিন রাতেই এরশাদকে আটক করে র্যাব ১-এর একটি দল নিয়ে যায় সিএসএইচে। পরদিন এক বিবৃতিতে এরশাদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি অসুস্থ নন। গ্রেপ্তারের জন্যই তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সেই বার্তায় তিনি দলের নেতাদের ধৈর্য ধরার এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সন্ধ্যায় রওশন এরশাদ সিএমএইচে যান। তিনি প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান করে দেশের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এরশাদের সঙ্গে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী সপরিবারে দেখা করেন এরশাদের সঙ্গে।