এ দেশেও দিল্লির আম আদমির মতো জাগরণ হতে পারে

0
108
Print Friendly, PDF & Email

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে এ দেশেও দিল্লির আম আদমির মতো জাগরণ হতে পারে। এ অবস্থায় কাউকে না কাউকে ডাক দিতে হবে। তিনি বলেন, সুশীল সমাজের ওপর দাগ পড়ে গেছে। টক-শোর আলোচকদের অনেকেই দলীয় প্রভাবমুক্ত নন। তবে এখনো কিছু কিছু মানুষ আছেন নির্দলীয়। তারা রাস্তায় নামলেই দিল্লির মতো ঢাকায় জাগরণ হয়ে যাবে। এ অচলাবস্থায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মতো ব্যক্তিরা ডাক দিলে এ দেশে নতুন কিছু হতে পারে। তাদের প্রতি মানুষের অনেক অস্থা। এখন তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোনে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, যে কোনো মূল্যে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ছাড়ের মনোবৃত্তি নিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে জাতি হিসেবে আমরা নিজেদেরই অপমান করছি। আমাদের মেধা, রাজনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির অপমান করছি। এ অবস্থা চলতে পারে না।

তিনি বলেন, সংঘাত-সহিংসতার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জাতিসত্তাকে অপমান করছি। পৃথিবীর মানুষ ভাববে, আমরা গণতন্ত্রের যোগ্য নই। এখনই তারা ভাবতে শুরু করেছে। দুজন মানুষ, দুটি বড় দলের নেত্রী, তারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। এটা আমাদের ঐতিহ্য নয়। আমাদের পঞ্চায়েতভিত্তিক যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল সেদিক থেকেই সব কিছুর সমাধান করতে পারতাম। আমাদের বর্ণাঢ্য গণতান্ত্রিক ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। আমাদের তারানকোর দিকে তাকালে চলবে না। জাতি হিসেবে আমরা অনেক মেধাবী।

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বুঝতে হবে, আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর চাপ আছে। একসময় আমাদের জনসংখ্যার চাপটা দুর্বিষহ ছিল। দেশের উত্তরের জেলাগুলোয় প্রতি বছর মঙ্গা হতো। শিশুদের স্কুলে পাঠানো যেত না। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান, পোশাকশিল্পের মেয়েদের শ্রম, সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্ভাবনী চেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি মানুষ এখন নিজেরাই পরিবর্তনের পথে নিরন্তর কাজ করছে। রাজনৈতিক কারণে এ অর্জন বিনষ্ট হতে পারে না। সংঘাত-সহিংসতায় আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষ কাজের ক্ষেত্র হারিয়ে ফেলছে। উৎপাদন ও উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে থাকছে দিনের পর দিন। রপ্তানি থমকে গেছে। আমরা অগ্রগতির গতি হারিয়ে পেছনের দিকে যাচ্ছি। এ পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তারা যদি নির্বাচনে পরাজিতও হয় তাহলেও তাদের দেশসেবার সুযোগ থাকবে। আওয়ামী লীগ দেশে যে উন্নয়ন করেছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তার চেয়েও বেশি কাজ করতে হবে। তাই আওয়ামী লীগের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে তিনি নতুন ধরনের রাজনীতি করবেন। তাকে তার কথা রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। নইলে বিএনপি একসময় জামায়াত হয়ে যাবে। বিএনপিকে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনীতি করতে হলে জামায়াতকে ছাড়তে হবে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন এখন যে পর্যায়ে এসেছে, এ নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। এ নির্বাচনকে নিয়ে আমাদের মাথাব্যথাও নেই। নতুন সংসদের অধিবেশন ডেকে ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য নতুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান মেনে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিয়ে নির্বাচনে গেলেও হয়তো তারা জিতত। কিন্তু জামায়াতকে রেখে বিএনপি নির্বাচনে না এসে সে সুযোগ হারিয়েছে।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, রাজনৈতিক কারণে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। শিক্ষক হিসেবে কষ্ট লাগে, যখন দেখি আমার শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ক্লাসের বাইরে থাকছে। আমরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে মেধার অপচয় করছি। আমাদের রাজনীতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের অপমান করছি।

শেয়ার করুন