ঘরে-বাইরে প্রচ- চাপে সরকার

0
161
Print Friendly, PDF & Email

সব দলের অংশগ্রহণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আবার তৎপর হয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। তারা মনে করে একতরফা এই নির্বাচন বাংলাদেশে আরো অস্থিরতা ডেকে আনবে, বাড়বে সহিংসতা, ধ্বংস হবে দেশের অর্থনীতিযাযাদি রিপোর্ট ৫ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচন নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রচ- চাপে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে এই নির্বাচন বাতিল করে বিরোধী দলকে সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে শামিল করানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে নির্বাচনী আইন খতিয়ে দেখছে সরকার।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, প্রভাবশালী দেশগুলো মনে করছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র পথ নির্বাচন বন্ধ করা। তাই নির্বাচন বন্ধ করতে প্রভাবশালী দুটি দেশ সরকারের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, নতুন কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে মঙ্গলবার রাতে তিন দফা বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। প্রথমে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের বাসায়, দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বাসায় এবং সবশেষে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন, প্রধানমন্ত্রী আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজুল কবির কাওছার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বিদেশিদের অব্যাহত চাপের মুখে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী রংপুর যাওয়ার আগে নির্বাচন পেছানো যায় কিনা, এ সম্পর্কে আইনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিরও ওপর দায়িত্ব দেন। কমিটি রাতে আইন খতিয়ে দেখে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচন না পেছানোর ব্যাপারে অনঢ় অবস্থান নেন। তবে কূটনৈতিক চাপ এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে নতুন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। তিনি সেই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে অংশ নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন দেখা করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে। পরে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। মঙ্গলবার আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবিস্নউ মজিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার আবারো তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন।
এদিকে আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে বিজয়ী সাংসদদের শপথ অনুষ্ঠান করা যায় কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে আলোচনা করতে নির্বাচন কমিশনে যান আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীনের সঙ্গে তারা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ প্রতিনিধি দলকে জানান, সংসদ ভেঙে না দিলে এই সুযোগ নেই।
এদিকে বুধবার আনন্দবাজার জানায়, চলমান সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সব দলের অংশগ্রহণে হয় সে লক্ষে শেষ সময়ে তৎপর হয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার। সরকার যাতে এই নির্বাচন খারিজ করে বিরোধীদের সঙ্গে আরো আলোচনা করে নির্বাচনে তাদের শামিল করতে পারে সে জন্যই তারা চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বছর পার। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান আর খুঁজে পেল না বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর তৎপরতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসচিবরা বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু দুপক্ষের অনড় অবস্থানে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এবার নির্বাচনের দিন পাঁচেক আগে তাই নতুন করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ব্রিটেন ও আমেরিকার রাষ্ট্রদূতরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। আর তার ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে ইতোমধ্যেই একজন করে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে গিয়েছেন। নির্বাচনেও শাসক দলের একতরফা জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, এই নির্বাচন বাংলাদেশে আরো অস্থিরতা ডেকে আনবে। কারণ নির্বাচনকে সাজানো আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে বুধবার থেকেই লাগাতার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু করেছেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। শেষ সময়ে সরকার যাতে এই নির্বাচন খারিজ করে বিরোধীদের সঙ্গে আরো আলোচনা করে নির্বাচনে তাদের শামিল করতে পারে, সে জন্যই তৎপর হন ব্রিটিশ হাইকমিশনার এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
আনন্দবাজার লিখেছে, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সোমবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। মঙ্গলবার তিনি শাসক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাও এদিন বিরোধী নেত্রীর বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করেন। তারপর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্কট মেটাতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পথ খোঁজাটাই জরুরি। সেই নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গণতন্ত্রের মধ্যে সন্ত্রাস ও হিংসা কখনোই কাম্য নয়।’ হিংসাত্মক ঘটনায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে বিএনপির বেশ কিছু নেতাকে সরকার গ্রেপ্তার করেছে। মার্কিন দূত তার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘বিরোধীদের গ্রেপ্তার করে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টাও গণতন্ত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।’
আনন্দবাজার জানায়, তবে শাসক আওয়ামী লীগ বলছে, অনেক সাধ্যসাধনা করেও বিরোধী পক্ষকে আলোচনায় বসানো যায়নি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাদের আপত্তি। কিন্তু পাঁচ বছর সংসদ বয়কট করায় তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগও হাতছাড়া করেছে। তার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে খালেদা জিয়াকে আলোচনায় ডাকেন। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার পর নির্বাচন বাতিল করা হলে নির্বাচন কমিশনকে মামলার মুখে পড়তে হবে। তাই এখন আর তা করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে না আসার দায় বিরোধী দলের। প্রধানমন্ত্রী বুধবার ঢাকায় প্রচারে নেমেছেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ।

শেয়ার করুন