‘একতরফা’ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকতে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা ‘নতুন তৎপরতা’ শুরু করেছেন। হঠাৎ করে ‘নতুন পদ্ধতি’ নিয়ে ঝটিকা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। তাদের ‘নতুন পদ্ধতিটা’ হচ্ছে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনে সমঝোতার চেষ্টা করছেন তারা।
জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিদেশি কয়েকটি রাষ্ট্রসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা প্রধান দুই দলের অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘ব্যর্থ’ হয়ে নতুন এই তৎপরতা শুরু করেন। কূটনৈতিক, সরকার, বিএনপির কয়েকটি সূত্র এসব তথ্য জানায় প্রিয় দেশ ডটনেটকে।
কূটনৈতিক সূত্রের দেয়া তথ্যমতে, ‘আগামী ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের অনীহা এখনও আছে। নির্বাচনের পর কী হবে, তাও তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা এমনটাই জানিয়েছেন।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে রবার্ট গিবসন গত সোমবার, ড্যান মজিনা দেখা করেন গতকাল মঙ্গলবার। গিবসন দেখা মঙ্গলবার বৈঠক করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরির সঙ্গে তার বাসায় গিয়ে আজ বুধবার বৈঠক করেন মজিনা। তবে দুই দলের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কী কথা বলছেন কূটনৈতিকরা, কী বিষয়ে আলোচনা করছেন, এ নিয়ে কোনো পক্ষই মুখ খুলছেন না।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান রক্ষার জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হলেও এরপর আবারও যখন নির্বাচন হবে, তখন শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে বিরোধীরা নির্বাচনে যাবেন, এমন গ্যারান্টি কি? অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিণতি খুব সুখকর নাও হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নানাভাবে বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এই বাস্তবতা থেকে বাংলাদেশে নতুন করে একটি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।’
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ‘জাতীয় সরকার গঠনের পদ্ধতির কথা বলছেন কূটনৈতিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনে আগ্রহী আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে এরকম প্রস্তাব আগেই দেয়া হয়েছে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার এ প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়গুলো নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকদের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।’
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘জামায়াতকে জাতীয় সরকারে রাখা হবে না। সরকার একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। এখন পর্যন্ত জামায়াতের সাত নেতাসহ মোট নয়জনের সাজা হয়েছে। জামায়াতের আরো চার নেতা বিচারের অপেক্ষায় আছেন।’
বিএনপির সূত্র জানায়, ‘৫ জানুয়ারির আগেই জাতীয় সরকার গঠন করা যায় কী না, দলটির পক্ষ থেকে এরকম প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কূটনৈতিকদের কাছে। খালেদা জিয়া নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনে রাজি নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখে কোনো সরকারে অংশ নেয়ার পক্ষে নয় দলটি। তাছাড়া জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবটি মূলত আওয়ামী লীগের বলেও দলটি সন্দেহ করছে।’
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ‘জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ, সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনা, বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাদের কাছে তিনি দল, সরকারের বক্তব্য তুলে ধরছেন। সেজন্য তাকে কূটনৈতিক পাড়ায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। দলের সংবাদ সম্মেলন, কর্মসূচি, সভায় তিনি সময় দিতে পারছেন না। গত রোববারের পর থেকে সৈয়দ আশরাফ দলের সংবাদ সম্মেলন, কর্মসূচিতে সময় দিতে পারেননি।’
বিএনপির সূত্র জানায়, ‘শমসের মবিন চৌধুরি বিএনপির পক্ষে জাতীয় সরকার বিষয়ে কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনা, বৈঠক করছেন।’
রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় থেকে দুই পক্ষে দূতিয়ালি করেন। সেই দূতিয়ালিতেও কোনো সমাধান আসেনি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জাতিসংঘের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার তারানকো ঢাকায় এসে সমঝোতার জন্য দুই দলের মহাসচিবকে সামনাসামনি একটি বৈঠকে বসিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর, সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর দুই সপ্তাহ পর আবারও গত সোমবার থেকে কূটনৈতিক মহল থেকে নতুন তৎপরতা শুরু হয়েছে।