দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রিসভার কেউই মানছেন না গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও)। প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল নিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের।
অভিযোগ উঠেছে, মহাজোটের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ এবং সর্বশেষ রংপুরে নির্বাচনী সমাবেশে করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) উল্লিখিত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধেও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লাগাচ্ছেন।
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাঈদ পাবনা-৩ (সাথিয়া-বেড়া) আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান সরকারের ক্ষমতাধর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। অধ্যাপক আবু সাঈদ সরাসরি শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন।
বুধবার বিকেলে প্রাইম নিউজ.কম.বিডির এই প্রতিবেদকের কাছে অধ্যাপক সাঈদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সঙ্গী করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন শামসুল হক টুকু। তার (আবু সাঈদ) সমর্থকদেরও কোথাও কোথাও পুলিশ দিয়ে হয়রারি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। জেলা নির্বাচন অফিসকেও প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-সাংসদেরা সরকারি সুবিধা পাবেন না নির্বাচনের সময়। সরকার রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্প অনুমোদন বা কোনো প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করতে পারবেন না। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সাংসদেরা সরকারি সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রাইম নিউজ.কম.বিডিকে বলেন, যে কোনো প্রার্থীরই নির্বাচনী আচরণবিধি বা আরপিও মেনে চলা উচিৎ। প্রধানমন্ত্রী নিজেও নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না বলে শুনেছি। আইন সবার জন্য সমান। সব প্রার্থীকেই এই নির্বাচনী আইন মেনে প্রচারণা চালাতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে যে সব সুযোগ-সুবিধা নিতেন বা পেতেন, প্রার্থী হিসেবে সেই সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রেতো নয়ই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেরও দৃষ্টি ফেরানো উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবীদ।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রাইম নিউজ.কম.বিডিকে বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি সবাইকেই মেনে চলতে হবে। সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে নির্বাচন করার সুযোগটি সৃষ্টি হয়েছে। তবে নির্বাচনী বিধি-বিধান আছে। আছে গণতিনিধিত্ব অধ্যাদেশও। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রচারণা করার বিষয়ে বিধি-নিষেধও আছে। সেটা অবশ্য প্রার্থীকে মেনে চলতে হবে।