দুই দিনের চেষ্টার পরও ঢাকা অভিমুখে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ পালন করতে না পেরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। নির্বাচন প্রতিহত করতে কাল ১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ডেকেছে জোট। আজ সারা দেশে বিক্ষোভ করবে তারা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকারপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধনে এভাবে লাঠি বহন করতে দেখা গেছে । প্রথম আলোগতকাল সোমবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে ঢাকায় গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সারা দিন বাসায় ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। ফলে পর পর দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযাত্রা কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেল।
রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং নগরবাসীকে অবরুদ্ধ করে গত রোববার প্রথম দিনের ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ ব্যর্থ করে দেয় সরকার। এর প্রতিবাদে গতকালও একই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে অবস্থান কর্মসূচিও পালিত হয়নি।
বিরোধী জোট কর্মসূচি ডেকে চুপ থাকলেও মারমুখী সরকারি দল পথে পথে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা গতকালও ঢাকার ভেতরে বাস-ট্রেন-লঞ্চ ঢুকতে দেননি। বিরোধী জোটের কর্মসূচির উদ্দেশ্যই ছিল রাজধানীসহ সারা দেশকে অচল করে দেওয়া। বিরোধী জোট তা না পারলেও সরকারি দল পেরেছে। পুলিশের সহায়তায় সরকারি দলের ব্যাপক তৎপরতার কারণে সারা দেশের জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। দেশের কোনো জেলা-উপজেলা থেকে কোনো যানবাহন ঢাকা অভিমুখে আসতে পারেনি। রাজধানীর ভেতরেও গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এর ফলে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
প্রথম দিনের অভিযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিতে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে নয়াপল্টনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার চেষ্টা করলেও গতকাল সেই চেষ্টা করেননি। পুলিশ-র্যাব তাঁর গুলশানের বাসভবন গত শনিবার রাত থেকে ঘিরে রেখেছে।
খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা। গতকাল বেলা ১১টায় তোলা ছবি । প্রথম আলোগতকাল বিকেলে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে ওই বাসায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ ও রিয়াজ রহমানকে ঢুকতে দেয় পুলিশ। রাত পৌনে আটটার দিকে খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শমসের মবিনকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে আটক হতে দেখে বাসার ভেতরে ঢুকে যান সাবিহউদ্দিন। এর আগে দুপুরের দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাংসদ রাশেদা বেগম হীরা ও সাবেক সাংসদ হালিমা নেওয়াজকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সাত-আটজন সমর্থক নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ফিরিয়ে দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে উত্তেজনা: সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে দুপুরে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল ও জুতা ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
দুপুর ১২টার দিকে বিএনপিপন্থী অর্ধশতাধিক আইনজীবী কোর্ট প্রাঙ্গণে মিছিল করে প্রধান ফটকে উপস্থিত হন। সেখানে ঢুকে সরকারপন্থীদের হামলার প্রতিবাদে ও সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। রশি দিয়ে ফটকটি আগে থেকেই বন্ধ করে রাখা ছিল। ফটক ধরেই আইনজীবীরা বিক্ষোভ করছিলেন। ফটকের সামনে সড়ক ঘেঁষে ছিল পুলিশ। তখন সাবেক সাংসদ অপু উকিলসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ফটকটির সামনের সড়ক দিয়ে মৎস্য ভবন-সংলগ্ন সড়ক হয়ে প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিল যুব মহিলা লীগের একটি মিছিল। মিছিলটি ফটক বরাবর সড়কে এলে কয়েকজন নেতা-কর্মী আইনজীবীদের লক্ষ্য করে জুতা প্রদর্শন করেন। এরপর আইনজীবীদের ভিড় থেকে নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি ইটের টুকরা ছুড়ে মারা হয়। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও জুতা ছোড়াছুড়ি।
কয়েকটি ইটের টুকরা যাত্রীবাহী কয়েকটি যানবাহনে লাগে। মুহূর্তেই ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এ অবস্থা চলে। পরে আইনজীবীরা কোর্টের ভেতরে চলে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে সরকারপন্থী একটি মিছিল এসে প্রধান ফটক খোলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ঢুকে আইনজীবীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল আইনজীবী সমিতি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী এ সময় বলেন, হামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। তিনি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং গ্রেপ্তার হওয়া আরিফা মোমিনসহ সব আইনজীবীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দেশের প্রতিটি আদালতে কর্মবিরতি পালন করার সিদ্ধান্ত হয়।
রাজপথে আওয়ামী লীগ: দ্বিতীয় দিনেও রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। ভোর থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ডে জাতীয় পতাকা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে অবস্থান নেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমবেত হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।