দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আগামীকাল নতুন বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি, বুধবার) থেকেই সারা দেশে অনির্দিষ্ট কালের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়াররম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন সোমবার রাত সোয়া ৮টায় বসুন্ধরা এলাকায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি জানান, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ায় আগামী মঙ্গলবার সারা দেশে ১৮ দল বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে। বুধবার সকাল ছয়টা থেকে লাগাতার অবরোধ চলবে।
এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিরোধীদলীয় জোট বিভিন্ন মেয়াদের পাঁচ দফা অবরোধ দেয়ার পর গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা অভিমুখী ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রবিবার সেই কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা ও সরকারি দলের তৎপরতায় তা পণ্ড হয়ে যায়।
এই দিন বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার গুলশানের বাসভবন থেকেই বের হতে দেয়নি পুলিশ। পরে বেগম জিয়া বাসার বাইরের ফটকে দাঁড়িয়েই ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
এর পাশাপাশি রবিবার সন্ধ্যায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যারা ঢাকায় আসতে পারবেন না, তারা জেলা-উপজেলা-মহানগরীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এবং রেল-নৌ ও সড়ক পথ অবরোধ করবেন।”
এ ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে আসার পর পরই মেজর হাফিজকে আটক করে পুলিশ।
এ অবস্থার মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির পক্ষ থেকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ আগামী বুধবার থেকে লাগাতার অবরোধের ডাক দিলেন।
এ সময় তিনি বলেন, “১ জানুয়ারি বুধবার ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলবে। শান্তিপূর্ণ এ অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা দিলে এর পরিণতি ভালো হবে না।”
গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান খন্দকার মাহবুব।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় সরকার ভয় পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সারাদেশে নেতাকর্মীদের পাইকারিহারে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সরকার তার স্বৈরাচারী মনোভাবের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে।”
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এদেশের মানুষ বিএনপির ডাকে রাস্তায় নেমেছে।
সরকারকে ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, ঘোষিত তফসিল বাতিল করে সমঝোতার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। দাবি মানা না পর্যন্ত অবরোধ চলবে।
তবে ‘গণতন্ত্রে জন্য অভিযাত্রা’ কর্মসূচি বলবৎ থাকবে কি না সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি মাহবুব।
এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের সর্বশেষ ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ ২১ ডিসেম্বর সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে ২৪ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। এটি ছিল এই জোটের ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধ।
প্রথম দফায় ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৭১ ঘণ্টা, এরপর ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩১ ঘণ্টা, তৃতীয় দফায় ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ঘণ্টা এবং চতুর্থ দফায় ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ডাকে বিরোধী জোট।
গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ। যে নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রথম দফা অবরোধের ডাক দেয় ১৮-দলীয় জোট।
অবরোধের শুরু থেকেই সারা দেশে নাশকতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে থাকে। ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, গাড়িতে আগুন দেয়া, ভাঙচুর, রেললাইন উপড়ানো, রাস্তাঘাট কেটে ফেলা, গাছ কাটাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার কাজকর্ম চলে এ সময়ে।
এর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ও পেট্রলবোমা ছুড়ে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। এসব ঘটনায় যাত্রীসহ অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও বাসের চালক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
অবরোধে সহিংসতায় সারা দেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন হাজারের অধিক মানুষ।
এ সব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়