আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য দলে যেতে চান গোলাম মাওলা রনি। কার সঙ্গে বাঁধতে চান নতুন গাঁটছড়া? জানতে চাইলে বললেন, কথা হচ্ছে অনেকের সঙ্গেই। যুৎসই মনে হলেই যোগ দেবো।
যে দল গুরম্নত্ব দিয়ে নেবে সে দলেই যোগ দিয়ে রাজনীতি ও দেশের সেবা করবো, বলেন এই তরম্নণ রাজনীতিক। গোলাম মাওলা রনি বলেন, “পরিস্থিতি বাধ্য করলে যে কোনো দলেই যোগ দিতে পারি। আমার কোনো সমস্যা নেই।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিতে যোগ দিতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিলেও দলটির প্রশংসা ও সমালোচনা উভয়ই করেন রনি। এসময় তিনি সংসদে তার জামায়াত বিরোধী একটি ওয়াজ মাহফিলধর্মী বক্তৃতা ইউটিউব থেকে শুনিয়ে দেন।
রনি বলেন, জামায়াত একটি সুগঠিত দল। এর বিরোধীতা করতে হলে জেনে বুঝেই করতে হবে। দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ভঙ্গিমায় করতে হবে।
রনি তার রাজনৈতিক চিন্তôা চেতনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিচার বিশেস্নষণ এবং নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তôারিত কথা বলেন। তরম্নণ প্রজন্মের রাজনীতিকদের দক্ষতা-যোগ্যতা নিয়েও কথা হয় তার সঙ্গে।
দীর্ঘ আলোচনায় রনি আওয়ামী লীগের প্রতি তার অভিমান ও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান। তিনি বলেন, এই দলটির কারণেই তার রাজনীতির ওপর বিশ্বাস ও আস্থায় চির ধরেছে।
তিনি বলেন, তার স্পষ্টবাদীতা এবং দলের ভুলগুলো তুলে ধরার সৎসাহস দেখানোরই পরিণতি হিসেবে তাকে সরকারি দলের এমপি হয়েও কারাভোগ করতে হয়েছে। আর এ বিষয়ে দলের প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিলো বলেই মনে করেন তিনি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও পরে মনোনয়নপত্র জমা দেন নি গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ভুল, আর সে কারণে সেই ভুলের অংশীদার হয়ে থাকতে চাইনি।
দলের মনোনয়ন কেনো চান নি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ধরে নিতে পারেন দলের প্রতি এটি আমার ছোট্ট একটি প্রতিবাদ।
রনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সবসময় মধ্যম ও নিচের সারির নেতাদের উচ্ছিষ্ট দিতে অভ্যস্তô। কিন্তু আমি জানিয়ে দিলাম সব নেতা উচ্ছিষ্ট খাওয়ার জন্য ঘোরে না।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, আমি আমার সিক্সথ সেন্স ব্যবহার করে কাজ করি। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হচ্ছে না। তবে যদি হয়ে যায় তাহলে তা হবে পশ্চিমা বিশ্নের ফাঁদে পা দেওয়া।
তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব গর্ত খুঁড়ে আওয়ামী লীগকে ডাকছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই গর্তেই পড়তে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা তার দল।
রনি তার বিশেস্নষণে বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলেই বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে যাবে। আর নতুন সংসদ গঠনের পরপরই পশ্চিমা বিশ্ব তার সকল সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবে সরকারের সঙ্গে। তাতে স্রেফ একঘরে হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী সংবিধান মেনে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষেই নতুন করে একাদশ সংসদের নির্বাচনের কথা বলেছেন, এই প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা রনি বলেন, যেই সংসদ নির্বাচনই হোক আর যে দলই ক্ষমতায় আসুক তাদের পতন হবে অর্থনৈতিকভাবে।
রনির মতে, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তাতে তিন মাসে দেশের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই ক্ষতি কাঁধে নিয়ে দেশ চালানো অসম্্ভব হয়ে পড়বে।
তার মতে, বাংলাদেশ কোনো বিদেশি বন্ধু পাবে না, যে তাকে এই অর্থ দেবে। আর তখনই দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে ব্যয় করতে হবে। যা ডেকে আনবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা।
দেশে এখন রাজনৈতিক সংগ্রাম নয়, রাজনৈতিক যুদ্ধ চলছে, এই মত দিয়ে রনি বলেন, সকলেই উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে। তবে এর সমাধান আরও সহিংসতার মধ্য দিয়েই হবে বলে তিনি মনে করেন। এই পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী বলেও মনে করেন রনি।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের স্বার্থে আর এক বা দুই টার্ম নয় আমি মনে করি অন্তত ২৫ বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
রনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন আর নেই। তবে বিচ্ছিন্নও নই। এমপি হিসেবে এখনো বেতনভাতা-সুবিধা নিচ্ছি। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে দলের অন্য নেতাদের সম্পদ বাড়লেও তার সম্পদ কমেছে বলে দাবি করেন রনি। তিনি বলেন, আমি একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবেই নির্বাচন করে সংসদে আসি। রাজনীতিতে সময় দেওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে আমার ২৫ কোটি টাকা ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে।
যে কোনো দলে যেতে রাজি এমন কথা বললেও দল বিপাকে পড়লে সবার আগে ছুটে যাবেন বলেও দাবি করেন গোলাম মাওলা রনি। তবে মর্যাদা, সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে কখনোই যাবেন না।
রনি এও বলেন, নেত্রী ডাকলে সব অভিমান চলে যাবে। অভিমান আমি করতেই পারি। অভিমান আমার অধিকার।