বাংলাদেশে বিরোধী জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। রোববার গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির আগের রাতেই বাসা-বাড়ি-যানবাহন তল্লাশি করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাজনৈতিক কর্মী বা অন্য আটকদের খুঁজতে গেলে হয়রানি করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদেরও। তবে পুলিশ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। রমনা থানার প্রাচীরের পাশেই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে হাজতখানার দিকে তাকিয়ে ছিলেন এক নারী। কাকে খুঁজছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামীকে রাস্তা থেকে আটক করেছে পুলিশ। থানার ভেতরে প্রবেশের পর দেখা গেল সেখানে অপেক্ষা করছেন আরও অনেকে। সেখানেই আরেকজন বললেন, তার ভাইকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো সেটাই তারা জানতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই তার বন্ধুকে দেখতে হাসপাতালে এসেছে। কোন রাজনীতি করে না। নিরীহ মানুষ। এখন ধরে নিয়েছে। কি আর করবো। বিবিসির সাংবাদিক বলেন, থানা থেকে বেরিয়ে গেলাম পুরনো ঢাকার সিএমএম কোর্টে। সেখানে গারদখানায় ছিলেন আটক আরও অনেকেই। বাইরে অপেক্ষমাণ শত শত মানুষ যাদের স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের আটক করা হয়েছে গত কদিনের অভিযানে। অনেকে অভিযোগ করেন, তাদের কাছে টাকা পয়সা চাওয়া হয়েছে এবং সেটা না দিলে পুরানো মামলায় তাদের স্বজনদের জড়িত করা হচ্ছে। একজন বলেন, আমার ছোট ভাই পথচারী হিসেবে ভয়ে দৌড় দিয়েছিল। ধরে নিয়ে গেছে। আরেকজন বলেন, বাসার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তার ছেলে। সেখান থেকে আটক করেছে পুলিশ। অপর একজন বলেন, তার স্বজন গুলিস্তানে চা খাচ্ছিল। সে অবস্থাতেই ধরে নিয়েছে পুলিশ। রোববার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ জুড়ে সারাদেশ এমন অসংখ্য ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের অনেককেই ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। গত ক’দিনে দুই হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। তারা বলছে, ওই কর্মসূচির আগের অন্তত ৮ হাজার ব্যক্তিকে আটক করে রাখা হয়েছে। আরও অনেককে আটক করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নুর খান লিটন। তার অভিযোগ তল্লাশি অভিযানের সময় বাড়িঘর ভাংচুর ও অনেকের পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, শুধু ২৮শে ডিসেম্বর ঢাকাতেই দুই হাজার ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কোন কোন বাড়িতে তল্লাশির নামে ভাঙচুর এবং কোথাও কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বাণিজ্য করার অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, অপরাধী ধরতে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই অভিযানটি পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, অভিযোগগুলোর যুক্তি নেই। আমরা যাদের ধরেছি তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই আটক করা হয়েছে। এমনকি বাসা বাড়িতে অভিযান পরিচালনার সময় প্রত্যাশিত ব্যক্তিকে না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের গণহারে আটক বন্ধ করা উচিত। কারণ এ ধরনের আটকের ঘটনায় সাধারণ মানুষ বেশি হয়রানির শিকার হয়। তাদের মতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।